প্রাথমিক চিকিৎসা সাধারণত যেকোনো দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার চিকিৎসক কর্মী অথবা এম্বুলেন্স আসার আগে দেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্য চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর আসার পূর্বে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করা বা দুর্ঘটনার ক্ষতি বাড়তে না দেওয়া। যেকোনো দুর্ঘটনার পর হাতের কাছে যা আছে তা দিয়ে রোগীকে যত্ন নেওয়া, যাতে ডাক্তার আসার আগে তার অবস্থার অবনতি না হয় বা জটিলতা না বাড়ে, একেই প্রাথমিক চিকিৎসা বলে।
প্রাথমিক চিকিৎসা হলো যেকোনো দুর্ঘটনা বা আকস্মিক অসুস্থতার পর রোগীকে তাত্ক্ষণিকভাবে সাহায্য করার একটি প্রক্রিয়া, যা সাধারণত হাতের কাছে থাকা উপকরণ ব্যবহার করে করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখা এবং চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত গুরুতর অবনতির ঝুঁকি কমানো। প্রাথমিক চিকিৎসা সঠিকভাবে প্রদান করা হলে রোগীকে জটিলতা থেকে রক্ষা করা যায় এবং অনেক সময় জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। এতে সামান্য কিছু প্রাথমিক জ্ঞান থাকলেই বিপদের মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসা কেন দরকার?
ধরুন, আপনি একদিন বিকেলে হাঁটতে বেরিয়েছেন। হঠাৎ দেখলেন, রাস্তার ধারে একজন মানুষ পড়ে আছেন। কাছে গিয়ে দেখলেন, উনি আহত! রক্ত ঝরছে! এখন কি করবেন? অ্যাম্বুলেন্স ডাকবেন, ঠিক আছে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স আসতে তো সময় লাগবে, তাই না? ততক্ষণ কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন?
না, অবশ্যই না! আপনি নিশ্চয়ই কিছু একটা করার চেষ্টা করবেন। হয়তো রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করবেন, আশেপাশে কেউ থাকলে সাহায্য চাইবেন, অথবা আহত ব্যক্তিটিকে আরাম করতে সাহায্য করবেন। ঠিক এই ছোট ছোট কাজগুলোই হলো “প্রাথমিক চিকিৎসা”। মানে, কোনো দুর্ঘটনা বা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে, ডাক্তার আসার আগে, আপনি যে সাহায্যটুকু করতে পারেন, যাতে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ না হয়, বরং কিছুটা হলেও উন্নতি হয়।
একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, খেলতে খেলতে আপনার ছোট ভাইয়ের হাত কাঁটা পড়ে গেল। তখন আপনি কি করবেন? প্রথমে একটা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করবেন। তারপর ঘায়ে কোনো জীবাণুনাশক ক্রিম লাগিয়ে দেবেন আর একটা ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দেবেন। ব্যস, এটুকুই! এটাই প্রাথমিক চিকিৎসা। মনে রাখবেন, এই ধরনের ছোট ছোট কাজ অনেক সময় অনেক বড় বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে সবারই কিছুটা জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে
প্রাথমিক চিকিৎসার শুরুতে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে তার মধ্যে রয়েছে:
• ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক রাখা।
• অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করা।
• ভাঙ্গা হাড়ের যত্ন নেওয়া।
খেলাধুলা ও শরীর চর্চার সময় আমরা যেই সমস্ত দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে পারি সেগুলো এবং এর ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আমরা কি করতে পারি তা নিচে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ্য করা হলো।
কেটে যাওয়া
কেটে গেলে দুই ধরনের ক্ষতি হতে পারে। যথা গভীর এবং অগভীর। ক্ষতস্থান ভালোমতো পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। যাতে ক্ষতস্থানে কোন ময়লা না থাকে। ক্ষতস্থান থেকে যাতে বেশি রক্ত না বের হয় তাই দ্রুত ব্যান্ডেজ বা ক্ষতস্থানে কোন পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
পুড়ে যাওয়া
অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত কোন কারনে শরীরের যে কোন স্থান পুড়ে যেতে পারে। শরীরে পুড়ে যাওয়া স্থান প্রথমেই কমপক্ষে ১০ মিনিট ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে। কোন জায়গায় ফোস্কা দেখা দিলে তা গলানো যাবে না পুড়ে যাওয়ায় স্থান কোন পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে ।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া
আঘাত জনিত বা অন্য কোন কারণে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করলে সাথে সাথে তাকে চিৎ করে শোয়াতে হবে বা বসিয়ে মাথা পেছনের দিকে হেলিয়ে রাখতে হবে। নাকের সামনে ও ঘাড়ের পেছনে ঠান্ডা পানি ঝাপটা বা বরফ দিতে হবে। রক্ত পড়া বন্ধ হওয়ার পরও নাকে ছিদ্রের ভেতরে কিছুক্ষণ তুলো দিয়ে রাখতে হবে।
পেশির টান খাওয়া
আমাদের শরীরের মাংসপেশি অতিরিক্ত সংকুচিত হলে এই অবস্থা তৈরি হয়। পেশিতে টান খেলে অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হয়। এক্ষেত্রে টান খাওয়া বেশি দ্রুত প্রসারিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই ব্যথা কমানোর জন্য এখানে বরফ লাগানো যেতে পারে।
পেশি বা লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া
খেলাধুলা বা অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটি বা অন্য যেকোনো কারণে হঠাৎ সজোরে কোনো পেশি প্রসারিত হলে পেশি ছিড়ে যেতে পারে। এ সময় উক্ত স্থানে অত্যাধিক ব্যথা অনুভূত হতে পারে এবং ফুলে যেতে পারে। এ অবস্থায় নাড়াচাড়া কম করতে হবে। ব্যথার জন্য বরফ লাগানো যেতে পারে। ব্যথা পুরোপুরি ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেওয়াই শ্রেয়।
পা মচকানো
হঠাৎ কোনো কারণে হাড়ের সংযোগ স্থান মচকে গেলে ওই জায়গায় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর টান পড়ে বা ছিড়ে গিয়ে যে অসুবিধা সৃষ্টি হয় তাকে মচকানো বলে। এর ফলে প্রচন্ড ব্যথা এবং ফোলা ফোলা ভাব তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমেই মচকে যাওয়া অংশ যাতে বেশি নাড়াচাড়া না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যথা কমানোর জন্য বরফ বা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
শেষ কথা
আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল প্রাথমিক চিকিৎসা কাকে বলে বা প্রাথমিক চিকিৎসা কিভাবে করবেন। আশা করতেছি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা কিভাবে করবেন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেল আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ