শরীরে কোথাও কেটে গেলে দ্রুত করণীয়

বর্তমান সময়ে কোথাও কেটে গেলে দ্রুত সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা জেনে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে ইনফেকশন হওয়া ও গভীর দাগ হওয়া ঠেকানো যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যুর হাত থেকেও হয়তো কাওকে বাঁচাতে পারবেন।

ধারালো কোনো বস্তুতে কেটে গিয়ে ক্ষত সৃষ্টি হওয়াকে বলা হয় কাট ইনজুরি। আবার ভোঁতা কোনো জিনিস দিয়ে বা কোথাও পড়ে গিয়ে আঘাত পেলে সাধারণত ত্বক কেটে যায় না বরং থেঁতলে যায় বা ছিঁড়ে যায়- একে বলা হয় ল্যাসারেসন হওয়া। জেনে নিন, হঠাৎ কেটে গেলে দ্রুত করণীয়।

কেটে গেলে দ্রুত এই তিনটা কাজ করতে হবে

১. রক্ত পড়া বন্ধ করা।
২. কাটা জায়গাটা পরিষ্কার করা।
৩. তারপর সেটা ব্যান্ডেজ করে ফেলা।

কীভাবে এই কাজগুলো করবেন

এই কাজগুলো কীভাবে করবেন, তা এই লেখায় খুব সহজ করে বুঝিয়ে বলবো।

রক্ত পড়া বন্ধ করা

কোথাও কেটে গেলে সাধারণত কিছুক্ষণের মধ্যে নিজে নিজে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যদি বন্ধ না হয়, অনেক রক্ত পড়তে থাকে, তাহলে কীভাবে রক্ত পড়া বন্ধ করবেন, সেটা বলে দিচ্ছি। পরিষ্কার একটা কাপড় নিবেন। সেই কাপড়টা কাটা জায়গার ওপর চাপ দিয়ে ধরে রাখবেন ১০ মিনিট। নিজে নিজে এই কাজটা করতে হয়তো কষ্ট লাগবে। পারলে কারো সাহায্য নিবেন। এই সময়ে আরেকটা কাজ করবেন: কাটা জায়গাটা একটু উঁচু করে রাখবেন, যাতে সেখানে রক্ত চলাচল কিছুটা কমে গিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। যদি হাতে কোথাও কেটে গিয়ে থাকে, তাহলে হাতটা মাথার ওপর উঁচু করে ধরবেন। যদি কাটা জায়গা পা-য়ে হয়, তাহলে শুয়ে পা-টা উঁচু করে দিবেন। নিচে কয়েকটা বালিশ দিয়ে পা উঁচু করে রাখতে পারেন।

এরপরও যদি রক্ত পড়া বন্ধ না হয়, দেখেন কাপড়টা রক্তে ভিজে যাচ্ছে, তাহলে সেই কাপড়ের ওপরে আরও একটা কাপড় দিয়ে কাটা জায়গাটা ভালো করে পেঁচিয়ে নিবেন। তারপর সেখানে শক্ত করে চাপ দিয়ে ধরে রাখবেন আরও ১০ মিনিট।

একটা ভুল করবেন না, একটু পরপর কাপড় তুলে দেখতে যাবেন না যে রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে কি না। আপনি যখনই এভাবে দেখতে যাবেন, তখন কাটা জায়গার ওপর থেকে চাপ সরে যায়, ফলে রক্ত পড়া থামতে সময় বেশি লাগে। সাধারণত ছোটোখাটো কাটা জায়গায় কিছুক্ষণ চাপ দিয়ে রাখলেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই যেভাবে বললাম, একটু ধৈর্য ধরে চাপ দিয়ে ধরে রাখবেন।

কাটা জায়গাটা পরিষ্কার করা

যখন রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে, তখন কাটা জায়গাটা পরিষ্কার করতে হবে। সেজন্য আগে আপনি ভালো করে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিবেন। তারপর কাটা জায়গাটা পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিবেন। এই কাজে বিশুদ্ধ পানি বা খাবার পানি ব্যবহার করবেন। কোন অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম দেয়া লাগবে না। কাটা জায়গার আশেপাশের চামড়ায় যদি ধুলাবালি-ময়লা লেগে থাকে, তাহলে সেটা সাবান-পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। তবে খেয়াল রাখবেন কাটা জায়গার ভেতরে যাতে সাবান না যায়, কারণ সাবান ঢুকলে জায়গাটা জ্বলবে। ধোয়ার পর একটা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে হালকা করে চেপে চেপে জায়গাটা শুকিয়ে নিবেন।

সাধারণত কাটা জায়গায় অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম লাগানো দরকার পরে না। তবে এই পরিস্থিতিতে, যেখানে হয়তো আপনার জানার সুযোগ নেই যে কীসে লেগে কাটলো, সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম লাগাতে পারেন। সেটা হাতের কাছে না থাকলে ভ্যাজলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাবেন। তাতে কাটা জায়গাটা তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে।

ব্যান্ডেজ করে ফেলা

এরপর কাটা জায়গাটা ব্যান্ডেজ করতে হবে, যাতে বাইরের ধুলাবালি ও রোগজীবাণু এর মধ্যে না ঢুকতে পারে আর কাটা জায়গাটা তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে। ফার্মেসিতে কিছু ব্যান্ডেজ কিনতে পাওয়া যায়, যেগুলো কাটা জায়গাটাকে ঢেকে দিয়ে চারপাশে আঠার সাহায্যে লেগে থাকে। এগুলো সার্জিন প্যাড ও সার্জিন পোর-সহ বিভিন্ন নামে কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া গজ ব্যান্ডেজও ব্যবহার করতে পারেন।

প্রতিদিন ব্যান্ডেজ পালটাবেন। পালটানোর সময় আবার ভ্যাজলিন লাগাবেন। ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ওষুধ খেতে পারেন। সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই ছোটখাটো কাটা-ছেঁড়া সেরে যায়।

কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?

  • কাটা জায়গা যদি ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়, ব্যথা বাড়তে থাকে, বা পুঁজ বের হতে থাকে।
  • আপনার যদি জ্বর আসে বা শরীর খারাপ লাগতে থাকে।
  • কাটা জায়গার ভেতরে যদি মাটি থাকে।
  • যদি টিটেনাসের সব টিকা না দেয়া থাকে।

কখন দ্রুত হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যেতে হবে?

  • যদি রক্ত পড়া বন্ধ করতে না পারেন, বা ফিনকি দিয়ে টকটকে লাল রক্ত বের হতে থাকে।
  • কাটা জায়গার আশেপাশে যদি অবশ লাগে বা নাড়াতে পারছেন না এমন মনে হয়।
  • হাতের তালুতে বা চেহারায় কোথাও গুরুতরভাবে কেটে যায়।
  • কাটা জায়গায় যদি কিছু আটকে থাকে, যেমন কাঁচের টুকরা।
  • কাটা জায়গাটা যদি খুব বড় বা গভীর হয়।

শেষ কথা

রান্নাঘরে বা অন্য কোনো কাজ করতে গেলে ধারালো কিছুতে হঠা ৎ হাত-পা কেটে যেতে পারে। আজকে আলোচনায় আমরা শরীরে কোথাও কেটে গেলে দ্রুত করণীয় তিনটা কাজ নিয়ে আলোচনা করেছি। যদি আমাদের এই পোস্ট আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে।  তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদের কে এই পোস্ট শেয়ার করে তাদেরকে শরীরে কোথাও কেটে গেলে দ্রুত করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে দিন।  ধন্যবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top