চুলকানি অনেক বিরক্তিকর একটা সমস্যা, তাই না? বাংলাদেশে তো প্রায় সবারই কম-বেশি এই সমস্যা আছে। অনেকে ডাক্তার দেখান, আবার অনেকে ঘরে বসেই চিকিৎসা করতে চান। তবে মনে রাখবেন, কোন ওষুধটা আপনার জন্য ভালো হবে, সেটা একজন ডাক্তারই ভালো বলতে পারবেন। এলার্জির সমস্যায় সবচেয়ে বেশি যে ঔষধটা খাওয়া হয় সেটা হলো অ্যান্টিহিস্টামিন। আমাদের শরীরে যখন এলার্জি হয়, তখন হিস্টামিন নামের একটা জিনিস বের হয়, আর এই অ্যান্টিহিস্টামিন সেই হিস্টামিনকে আটকে দেয়।
যারা প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা করতে চান, তারা সাধারণত এন্টিহিস্টামিন বা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ খেয়ে থাকেন। আপনি যদি চুলকানির জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু ঔষধের নাম জানতে চান, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। এখানে আমি কিছু ঔষধের নাম বলবো, যেগুলো আপনার চুলকানি কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিছু ঘরোয়া টিপসও দেবো, যেগুলো চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে সাহায্য করবে।
এলার্জির ঔষধ এর নাম
এলার্জির সম্পূর্ণ নিরাময় সাধারণত সম্ভব নয়, কারণ এলার্জি মূলত আপনার ইমিউন সিস্টেমের অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া। তবে লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ ও উপশমের জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। নিচে কিছু কার্যকর ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতির উল্লেখ করা হলো:
১. অ্যান্টিহিস্টামিন
এলার্জির সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ, যা হাইস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থের প্রভাব কমিয়ে এনে লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। কিছু জনপ্রিয় অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ হলো:
- Cetirizine (সেটিরিজিন) (Zyrtec)
- Loratadine (লোরাটাডিন) (Claritin)
- Fexofenadine (ফেক্সোফেনাডিন) (Allegra)
- Levocetirizine (লেভোসেটিরিজিন) (Xyzal)
হিস্টাকাইন্ড ১২০ এম জি, ন্যাসিভিওন এলার্জি ১২০, গ্লেনফাইন ১২০ , অ্যালারনেক্স ১২০ এগুলো এলার্জির লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে এমনকি লক্ষণ দেখা দেওয়ার পূর্বেও সেবন করা যায়। যেমন, কারও যদি ধুলাবালিতে এলা.র্জি থাকে এবং বিশেষ প্রয়োজনে তার ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হয়, সেক্ষেত্রে আগেই অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করা যায়।
২. ডিকনজেস্ট্যান্টস
ডিকনজেস্ট্যান্ট আসলে এক ধরণের ঔষধ যেটা আমাদের নাক বন্ধ হয়ে গেলে খোলা করতে সাহায্য করে। ঠান্ডা লাগলে অথবা অ্যালার্জির কারণে যখন নাক বন্ধ হয়ে যায়, তখন এই ঔষধ খুব ই কার্যকরী। কিছু ডিকনজেস্ট্যান্ট ঔষধ হলো:
- Pseudoephedrine (পসুডোএফেড্রিন) (Sudafed)
- Oxymetazoline (অক্সিমেটাজোলিন) (Afrin) (নাসাল স্প্রে হিসেবে)
৩. কোরটিকোস্টেরয়েডস (Steroid Nasal Sprays)
এটি একটি শক্তিশালী ঔষধ। এটি শরীরের ভেতরের যেকোনো প্রদাহ বা ফোলা কমাতে সাহায্য করে। তাই এলার্জির সমস্যা যদি বেশি দিন থাকে, তাহলে এই ঔষধ খুব ই কার্যকরী। কিছু কোরটিকোস্টেরয়েডস ঔষধ হলো:
- Fluticasone (ফ্লুটিকাসোন) (Flonase)
- Mometasone (মোমেটাসোন) (Nasonex)
- Budesonide (বুডেসোনাইড) (Rhinocort)
৪. লিউকোট্রাইন রিসেপ্টর ব্লকার
আমাদের শরীরে হিস্টামিন ছাড়াও লিউকোট্রাইন নামে আরেকটা জিনিস থাকে যা এলার্জির সমস্যা করে। এই ঔষধ সেই লিউকোট্রাইন কে কমিয়ে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- Montelukast (মন্টেলুকাস্ট) (Singulair)
৫. ইমিউনোথেরাপি (Allergy Shots বা Sublingual Tablets)
এটি এলার্জির দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে ধীরে ধীরে আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সংবেদনশীল উপাদানের প্রতি সহনশীল করা হয়। সাধারণত এটি কয়েক বছরের জন্য দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি এলার্জির সম্পূর্ণ উপশম করতে পারে, তবে এর জন্য ধৈর্য্য ও নিয়মিত চিকিৎসা প্রয়োজন।
৬. প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়
- নাক পরিষ্কার রাখতে স্যালাইন ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।
- যেসব পদার্থে আপনার এলার্জি হয় (ধূলা, পোলেন, পশুর লোম) তা থেকে দূরে থাকতে হবে।
এলার্জি সাধারণত সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আপনি এর লক্ষণগুলো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। একজন ভালো ইমিউনোলজিস্ট বা এলার্জি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে ইমিউনোথেরাপি বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।
মনে রাখতে হবে
হাঁচি-কাশি, চোখ-নাক দিয়ে পানি পড়া, শরীরে ফুসকুড়ি, চুলকানি এই সব কিছুই তো এলার্জির লক্ষণ। আর এলার্জির মধ্যে সবচেয়ে যন্ত্রণার হল ত্বকের এলার্জি। রক্তে এলার্জি হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে কারণ এটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ঠান্ডা লাগা, নাকের এলার্জি, মুখের এলার্জি এই সব ধরণের এলার্জির জন্য আলাদা আলাদা ঔষধ আছে। তবে কোন ঔষধ আপনার জন্য ভালো হবে সেটা ডাক্তার বলতে পারবেন।
শেষ কথা
আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল এলার্জির ঔষধ এর নাম বা কি ঔষধ সেবন করলে শরীরের চুলকানি কমবে। আশা করতেছি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে এই এলার্জির ঔষধ গুলোর নাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেল আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ