কোমর ব্যথা কমানোর ঔষধ এর নাম

বর্তমান সময়ে ব্যাক পেইন বা কোমর ব্যথা এর জন্য কম বেশি সবাই ভুগে থাকেন। কোমর ব্যাথা বা লো-ব্যাক পেইন খুবই ভয়ানক একটি রোগ। কোমর ব্যথা বা মাথা ব্যথা হলে বসে থাকা, হাঁটাহাঁটি কষ্টের মনে হয়।যাদের কোমর ব্যথা হয় তারাই শুধুমাত্র জানে এই রোগের যন্ত্রনা। অনেকেই ব্যথা প্রশমিত করার জন্য কোমরের ব্যথার বিভিন্ন পন্থা যেমন ব্যাথার ব্যথার ঔষধ, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট (আরও জানুন), মলম, বেল্ট (আরও জানুন) এবং ঘরোয়া উপায় (আরও জানুন) অবলম্বন করে থাকে।

কোমর ব্যাথার সাধারনত কোমড়ের নিচের অংশের ব্যাথাকে কোমড় ব্যাথা বলা হয়। কোমর ব্যাথা মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে দিকে হতে পারে। মাঝে হতে পারে অথবা মেরুদন্ডের দুই পাশেও হতে পারে। পয়ঃনিষ্কাশনের উপরের রাস্তায় হতে পারে। আজকে আমরা জানবো কোমর ব্যথা কেন হয়, যে ডাক্তার দেখাতে হবে, কোমর ব্যথার সবথেকে ভালো ওষুধের নাম ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

কোমর ব্যথা কি এবং কারণ

কোমরের ব্যথা (Lower Back Pain) হল কোমরের নিচের অংশে ব্যথা, যা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। কোমর ব্যথার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। পরিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে কোমর ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। কোমরের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যা কখনও কখনও খুব সাধারণ বা কখনো কখনো গুরুতর সমস্যার ফলে হতে পারে। কোমরের ব্যথার প্রধান কারণগুলো হল:

  • কোমরের অস্থিসন্ধিতে আর্থ্রাইটিস বা অস্থির ক্ষয় দেখা যাওয়া বয়স্কদের মধ্যে কোমরের ব্যথার একটি সাধারণ কারণ। বিশেষত অস্টিওআর্থ্রাইটিস অস্থিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।
  • খারাপ ভঙ্গিতে বসা, দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা এবং ব্যায়াম না করা বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে কোমরে চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে।অস্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান করা কোমরের ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলি মেরুদণ্ডকে নমনীয়তা দেয়। এই ডিস্কগুলি সরে গেলে, চাপ বা ব্যথা হতে পারে।
  • পিএলআইডি পূর্ণরূপ হলো Prolapsed Lumbar Intervertebral Disc, যা কোমরের ডিস্কের সমস্যা। এটি তখন ঘটে যখন মেরুদণ্ডের লাম্বার অঞ্চলে (কোমরের অংশে) ডিস্কের অভ্যন্তরীণ অংশ ডিস্কের বাইরের অংশ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। এর ফলে ডিস্ক স্থানচ্যুত হয় এবং কাছাকাছি স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলে, যা কোমরের ব্যথা বাড়ায়।
  • অস্টিওপোরোসিস বা অস্থি পাতলা বা দুর্বল হয়ে গেলে, মেরুদণ্ডের হাড় দুর্বল হয়ে কোমরে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম, ভারী কিছু তোলা এবং হঠাৎ করে শরীরের ভঙ্গি পরিবর্তন করার ফলে কোমরের মাংসপেশী টান পড়ে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে
  • অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • মেয়েদের প্রস্রাবে ইনফেকশন,কিডনির সমস্যা, বা টিউমার,ক্যান্সার, এইডস, অস্টিওপোরোসিস সেই সাথে দীর্ঘকাল স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনের ফলেও কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে।

কোমর ব্যথার জন্য যে ডাক্তার দেখাতে হবে

মেরুদন্ডের ব্যথা বা অসুবিধার জন্য নিউরোলজিস্ট, আর্থোপেডিক ডাক্তার,ফিজিশিয়ান দেখতে পারেন।

কোমর ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট এর নাম

বর্তমান সময়ে ফার্মেসিতে অনেক ধরনের কোমর ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট পাওয়া যায়। তবে এ সকল ব্যাথা কমানোর ট্যাবলেট খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং সে অনুযায়ী ট্যাবলেট সেবন করা উচিত।বাংলাদেশে ব্র্যান্ড এবং ফার্মেসির উপর ভিত্তি করে কোমর ব্যথার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ দাম ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে কোমর ব্যথার জন্য বহুল ব্যবহৃত কিছু ওষুধের নাম ও দাম নিম্নরূপ:

  • Ace 500 mg, দাম: ১২ টাকা
    কোমর ব্যথার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সাধারণত ব্যথা কমানর জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে মৃদু ব্যথার ক্ষেত্রে।
  • Brufen 400 mg, দাম: ৫০-১০০ টাকা
    মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের কোমর ব্যথার জন্য বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
  • Capgesic 0.025%, দাম: ৫০-৬০টাকা]
    ত্বকের উপর ব্যবহার করে ব্যথা উপশম করা হয়।
  • Naprosyn 500 mg, দাম: ১৬০ টাকা
    কোমর ব্যথা কমাতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
  • Sirdalud 2 mg, দাম: ১১৫ টাকা
    পেশীর টান কমাতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
  • Amitrip 25 mg, দাম: ১৭ টাকা
    দীর্ঘ সময় ধরে কোমর ব্যথার জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।
  • Emulgel 1%, দাম: ৫০ টাকা
    ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • Tramadol 50 mg, দাম: ৬০টাকা
    অতিমাত্রায় ব্যথার জন্য স্বল্পমেয়াদে ব্যবহার করা হয়। তবে এটি অভ্যাসে পরিণত হতে পারে, তাই সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হয়।
  • Baclon 10 mg, দাম: ১১০ টাকা
    কোমরের পেশীর ব্যথা কমাতে এবং পেশী শিথিল করতে করতে সাহায্যে করে।

সতর্কতা

কোমর ব্যথার ওষুধ গ্রহণের পূর্বে কিছুদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং বেশি সময় ধরে ব্যবহারে শারীরিক ক্ষতি হতে পারে কারণ এই ওষুধগুলোর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।বিশেষভাবে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা,মদ্যপান,লিভার ও কিডনি সমস্যা,ওপিওয়েডস সেবন,গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদানকালীন সময়ে ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট বাজারে অনেক ধরনের পাওয়া যায়। তাই ব্যাথা উপশম যেকোনো ওষুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

কোমর ব্যথা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

১. কোমর ব্যথার প্রধান কারণ কি?

উত্তর: পেশীতে টান বা মচকে যাওয়া, স্পন্ডিলাইটিস, ডিস্ক সমস্যা।

২. কখন ডাক্তারের কাছে যাব?

উত্তর: পায়ে ঝিঁঝি বা অবশ ভাব, পেশী দুর্বলতা, মল-মূত্র ত্যাগে সমস্যা, জ্বর, অজানা কারণে ওজন কমা, রাতে ব্যথা বেড়ে গেলে।

৩. ঘরে কি চিকিৎসা করব?

উত্তর: বিশ্রাম, ঠান্ডা/গরম সেঁক, ব্যথানাশক (ডাক্তারের পরামর্শে), হালকা ব্যায়াম (ডাক্তারের পরামর্শে)।

৪. কিভাবে প্রতিরোধ করব?

উত্তর: নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ভঙ্গি, স্বাস্থ্যকর ওজন, ধূমপান ত্যাগ, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার।

৫. ব্যথা কতদিন থাকবে?

উত্তর: কারণ ও তীব্রতার উপর নির্ভর করে। টান/মচকে কয়েকদিন-কয়েক সপ্তাহ। ডিস্ক/স্নায়ু বেশিদিন, চিকিৎসা লাগতে পারে।

শেষ কথা

আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল কোমরের ব্যথা কমানোর ঔষধ এর নাম। আশা করতেছি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে কোমর ব্যথা কেন হয়, যে ডাক্তার দেখাতে হবে, কোমর ব্যথার সবথেকে ভালো ওষুধের নাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেল আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top