পায়খানা ক্লিয়ার করার ঔষধ এর নাম

কোষ্ঠকাঠিন্য ( Constipation) হয় অন্ত্র বা নাড়িভুড়ির নাড়াচাড়া কমে যায় এবং মল বের হতে সমস্যা হয়। সাধারণত মানুষের মলত্যাগের পরিমান ও ঘনত্ব কমবেশি হয়ে থাকে।যদি কেউ সপ্তাহে ৩ বার বা এরও কম মলত্যাগ করে থাকেন বা মলের ঘনত্ব বেড়ে যায় যা মলত্যাগে বাধা দেয় বা সমস্যার সৃষ্টি করে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য নামে পরিচিত। কোষ্ঠকাঠিন্য খাদ্যনালীর অন্যতম স্বাভাবিক একটি সমস্যা প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময়ে এই রোগে ভুগে থাকেন।

সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত পায়খানা হওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমাদের শরীর যে খাবার গ্রহণ করে, তার পুষ্টি শোষণের পর বর্জ্য পদার্থগুলো মল হিসেবে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু নানা কারণে এই প্রক্রিয়া যখন ব্যাহত হয়, তখনই আমরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগি।

কোষ্ঠকাঠিন্য কি এবং কারণ

কোষ্ঠকাঠিন্য হল এমন একটি অবস্থা যেখানে মল শক্ত এবং শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে মলত্যাগ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। অনেক সময় মলত্যাগের সময় বেশি জোর দিতে হয় এবং পায়ুপথে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এটি আরও জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিছু প্রধান কারণ হল:

১. আঁশযুক্ত খাবার (যেমন ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য) কম খাওয়া এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি প্রধান কারণ।
২. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে মল শক্ত হয়ে যায় এবং মলত্যাগ কষ্টকর হয়ে পড়ে।
৩. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং নিয়মিত ব্যায়াম না করলে পাচনতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করে না, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৪. কিছু ওষুধ, যেমন ব্যথানাশক, এন্টিডিপ্রেসেন্ট, আয়রন সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।
৫.অতিরিক্ত মানসিক চাপ পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি করতে পারে।
৬. ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS), ক্রোন’স ডিজিজ ইত্যাদি অন্ত্রের রোগ কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

পায়খানা ক্লিয়ার করার ঔষধ এর নাম

পায়খানা ক্লিয়ার করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরণের ঔষধ পাওয়া যায়। এই ঔষধগুলো মূলত তিন ভাবে কাজ করে মল নরম করে, অন্ত্রের পেশীগুলোকে উদ্দীপিত করে অন্ত্রের চলাচল বৃদ্ধি করে, যার ফলে মল দ্রুত শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং অন্ত্রে পানি টেনে আনে। কিছু জনপ্রিয় ঔষধ এর নাম:

  • Avolac Syrup 100 ml/200 ml
  • Lubilax 8 mcg
  • Duralax 5 mg
  • Dulcolax 5 mg
  • Lactulose 100 ml
  • Sergel Mups 20 mg
  • Glycerin Suppository
  • Docusate Sodium
  • Omidon 10 mg
  • Sopilax 10 mg

কোন ঔষধে কি পরিমাণে সেবন করলে আপনার আমার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে নিবেন।

পায়খানা ক্লিয়ার করার ঔষধ এর দাম

ঔষধের দাম কোম্পানি এবং পরিমাণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, দাম ৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে হয়। কিছু ঔষধের দাম:

  • Avolac Syrup 100 ml/200 ml, দাম: ২০০ টাকা / ৩২০ টাকা
  • Lubilax 8 mcg ১৫০ টাকা
  • Duralax 5 mg ১৫ টাকা
  • Sergel Mups 20 mg ১১০ টাকা
  • Sopilax 10 mg ১০০ টাকা

সতর্কতা

কোনো ঔষধ খাওয়ার আগে, একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। নিজে নিজে কোনো ওষুধ খাবেন না। যদি আপনি গর্ভবতী হন বা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তাহলে ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। মনে রাখবেন, ওষুধের প্যাকেটে যা লেখা আছে ঠিক ততটুকুই খাবেন। বেশি খেলে বিপদ হতে পারে। পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট খেলে সাধারণত কিছু সমস্যা হয় না, আর হলেও তা খুব কম সময়ের জন্য হয়। তবে কখনো কখনো গুরুতর সমস্যা ও হতে পারে।

পায়খানা ক্লিয়ার করা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

১. পেট পরিষ্কার না হলে কি করব?

প্রথমেই চিন্তার কিছু নেই। প্রচুর পানি পান করুন। ফলমূল, শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খান। নিয়মিত হাঁটাচলা করুন। দেখবেন, উপকার পাবেন।

২. কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ কতদিন খেতে হবে?

ঔষধ কতদিন খাবেন, তা নির্ভর করে আপনার শরীরের অবস্থার উপর। ডাক্তারের সাথে কথা বলে ঠিক মতো ঔষধ খান।

৩. ঔষধ খেলে কখন কাজ করবে?

সাধারণত ঔষধ খাওয়ার ৬-১২ ঘণ্টার মধ্যে কাজ শুরু করে। তবে, ঔষধের ধরণ অনুসারে এটি ভিন্ন হতে পারে।

৪. পেট পরিষ্কারের জন্য ঘরোয়া উপায় কি আছে?

অবশ্যই আছে! ঈষদুষ্ণ গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। এছাড়াও, পেঁপে, কলা, টক দই খেলেও উপকার পাবেন।

৫. পেট সবসময় পরিষ্কার না হলে কি সমস্যা হতে পারে?

হ্যাঁ, দীর্ঘদিন পেট পরিষ্কার না হলে অনেক সমস্যা হতে পারে, যেমন: অর্শ, পেট ফাঁপা, বদহজম ইত্যাদি।

শেষ কথা

আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল পায়খানা ক্লিয়ার করার ঔষধ এর নাম। আশা করতেছি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য কি এবং কারণ, পায়খানা ক্লিয়ার করার সবথেকে ভালো ওষুধের নাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেল আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top