যক্ষা রোগের লক্ষণ কি

যক্ষ্মা মাইকোব্যাকটেরিয়াম ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণে হয়ে থাকে। যক্ষা রোগ বা টিবি বা টিউবারকুলোসি একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ।যক্ষা রোগের ফলে ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। যক্ষা রোগের কারন হলো Mycobacterium নামক ব্যাকটেরিয়া। এটি মূলত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়, এবং এটি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। নিচে যক্ষা রোগের লক্ষণ, ধরন, সংক্রমণের প্রক্রিয়া, কারণ এবং চিকিৎসা উল্লেখ্য করা হলো।

যক্ষ্মা কীভাবে ছড়ায়

যক্ষ্মা রোগ ছড়ায় মূলত বাতাসের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু আরেক ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে। এ ছাড়া কাঁচা দুধ, পাস্তুরিত দুধের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে যক্ষ্মা। ঘন বসতি, নোংরা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিম্ন জীবনমান, অপুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব ইত্যাদি যক্ষ্মা সংক্রমণে সাহায্য করে। যেকোনো বয়সে যক্ষ্মা হতে পারে।

যক্ষা রোগের ধরন

যক্ষ্মাসংক্রামক হলেও এটি সহজে ছড়ায় না। সংক্রমিত ব্যক্তির আশে পাশে থাকলে কেবলমাত্র এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে যক্ষা পরিবারের সদস্য বা সহকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি যদি যক্ষ্মারোগ ব্যাকটেরিয়া আপনার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাহলে আপনি সাথে সাথে অসুস্থ হবেন না। আপনার শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই লড়াই করে এটিকে ধ্বংসের চেষ্টা করে। অনেক লোকের মধ্যে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাকটেরিয়াকে ক্রমবর্ধমান থেকে থামাতে সক্ষম হয়। তবে এ ধরনের মানুষের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সুপ্ত লুকিয়ে থাকে। এই পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে যক্ষা কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

যক্ষার প্রধান দুটি ধরন রয়েছে

• সুপ্ত যক্ষা (Latent TB): সুপ্ত যক্ষ্মা অনেক বছর ধরে কোন উপসর্গ ছাড়ায়। এটি তখন ঘটে যখন কোনো ব্যক্তি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়, তবে তার শরীরে কোনো সক্রিয় লক্ষণ দেখা যায় না। এই অবস্থায় জীবাণু শরীরে নিস্তেজ অবস্থায় থাকে এবং রোগের বিস্তার ঘটায় না। তবে, যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তখন এই জীবাণুগুলো সক্রিয় হয়ে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। যদি অন্য কোন অবস্থা যেমন এইচআইভি সংক্রমণ, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে, তাহলে সুপ্ত টিবি সক্রিয় টিবিতে অগ্রসর হতে পারে।

• সক্রিয় যক্ষা (Active TB): শিশু এবং প্রবীণ অনেকেই টিবির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয় না। এই ধরনের ক্ষেত্রে, ব্যাকটেরিয়া শরীরের ভিতরে ছড়িয়ে পরে। ফলে যক্ষ্মা সক্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। এই অবস্থায় রোগীর শরীরে জীবাণু সক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পায় এবং রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। সক্রিয় যক্ষা অত্যন্ত সংক্রামক, কারণ এই অবস্থায় হাঁচি, কাশি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে জীবাণু বাতাসে ছড়ায়।

যক্ষা রোগের লক্ষণসমূহ

যক্ষা রোগ এর বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। লক্ষণ সমূহ সংক্রমণের তীব্রতা এবং রোগীর শরীরের অন্যান্য অবস্থার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। এখানে যক্ষার লক্ষণগুলো দেওয়া হলো:

১. জ্বর

• যক্ষার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে হালকা থেকে মাঝারি জ্বর থাকতে পারে।
• জ্বর দিনে একটু কম থাকে এবং রাতে বৃদ্ধি পায়।
• এই জ্বর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং রাতের সময় বৃদ্ধি পায়।

২. রাত্রে ঘামানো

• এটি রোগের অন্যতম লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়, এবং যক্ষা রোগী অনেক সময় ঘামানোর জন্য রাতে বিছানার চাদর বা বালিশ ভেজা পায়।
• রাতে বিশেষ করে প্রচুর ঘাম হয়।

৩. দীর্ঘস্থায়ী কাশি

• কাশি হতে পারে এবং এই সমস্যা থাকতে পারে তিন সপ্তাহ বা তার বেশি।
• কাশির সময় মাঝে মাঝে রক্তও আসতে পারে। এটি তখন হয় যখন ফুসফুসের ভেতর সংক্রমণ এবং রক্তক্ষরণ গভীর হয়।

৪. বুকে ব্যথা

• এই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং দিন দিন ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে।
• ফুসফুসে সংক্রমণের জন্য বুকের ব্যথা হতে পারে।
• কাশির সময় বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে হয়।

৫. ক্ষুধামন্দা

• খাবারে অনীহা তৈরি হয়।
• রোগী খেতে চায় না।
• খাদ্য গ্রহণ কম হয়।
• পুষ্টিহীনতা বাড়ে।
• শরীরে শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

৬.শ্বাসকষ্ট

• রোগের উন্নয়ন পর্যায়ে শ্বাসকষ্টের মাত্রা বেড়ে যায়।
• যক্ষা রোগে ফুসফুসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

৭. ওজন কমে যাওয়া

• মেটাবোলিক পরিবর্তনের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
• ওজন দ্রুত কমে যেতে থাকে।

৮. ক্লান্তি ও দুর্বলতা

• রোগী সারাক্ষণ ক্লান্তি বোধ করে।
• দৈনন্দিন কাজ করতে ইচ্ছা করে না।
• শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
• শরীরের পুষ্টি শোষণ কমে যাওয়া।
• শারীরিক চাপের কারণে ক্লান্তি দেখা দেয়।

শেষ কথা

যক্ষ্মা এখন নিরাময়যোগ্য অসুখ। আশা করতেছি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে যক্ষা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেল আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top