কি কি কারণে গলা ব্যথা হয়, উপসর্গ ও চিকিৎসা

গলা ব্যথা হল গলার প্রদাহ এবং যন্ত্রণা, এতে গিলতেও কষ্ট হয়। এটি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস উভয়ের সংক্রমণের কারণে ঘটে। ভাইরাল সংক্রমণ সাধারণত স্ব-সীমাবদ্ধ এবং এর উপসর্গ অনুসারে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন। গলা ব্যথা অসংক্রামকও হতে পারে এবং ধূমপান, শুষ্ক বাতাস, তামাক অথবা প্রচণ্ড দূষণের ফলে সৃষ্ট অস্বস্তির কারণে হতে পারে। আসুন সমস্যাটির বিভিন্ন লক্ষণ, উপসর্গ ও করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।

গলা ব্যথা কি?

গলা ব্যথা যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ফ্যারিঞ্জাইটিস (Pharyngitis)। গলা ব্যথা হলো গলার পেছনের অংশে অনুভূত হওয়া অস্বস্তি বা ব্যথা। এটি সাধারণত সংক্রমণ, প্রদাহ, বা গলার আঘাতের কারণে ঘটে। গলা ব্যথা বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন হালকা অস্বস্তি থেকে শুরু করে তীব্র ব্যথা পর্যন্ত। এই ব্যথা গিলতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং কখনো কখনো কাশি, শুষ্কতা, বা গলার ভেতরে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। প্রধানত ঠান্ডা ও ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) এর জীবাণুর সংক্রমণে গলায় এ ধরণের সমস্যা হতে দেখা যায়। অনেক সময় গলা ব্যথার জন্য গলায় শুষ্ক চুলকানি হওয়া সহ ঢোক গিলতে, কিংবা খাবার গিলতেও সমস্যা হয়ে থাকে।

গলা ব্যথার সম্ভাব্য কারণসমূহ

গলা ব্যথা নানা কারণে হতে পারে, যা সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে শুরু করে জীবনযাপনের কিছু অভ্যাসের ফলাফল। নিচে গলা ব্যথার কয়েকটি সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
১. ভাইরাসের কারণে গলা ব্যথা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সাধারণ সর্দি, ফ্লু, বা মনোনিউক্লিওসিসের মতো ভাইরাসজনিত রোগের কারণে গলা ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও, হাম এবং চিকেনপক্স ভাইরাসও গলার প্রদাহের কারণ হতে পারে।

২. গলা ব্যথার আরেকটি কারণ হলো ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, বিশেষ করে টনসিলের সংক্রমণ এবং ডিপথেরিয়া। স্ট্রেপটোকক্কাল ইনফেকশন নামে পরিচিত স্ট্রেপ থ্রোটও ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে এবং তীব্র গলা ব্যথার জন্য দায়ী।

৩. এইচআইভির প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে গলা ব্যথা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে অন্যান্য সংক্রমণও গলা ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

৪. ধুলাবালি, পশুর লোম, বা ফুলের রেণুর প্রতি অ্যালার্জি থাকলে গলা ব্যথা হতে পারে। এটি সাধারণত গলা শুষ্ক হয়ে যাওয়া বা এলার্জির প্রতিক্রিয়ায় প্রদাহ সৃষ্টি করে।

৫. শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া বা ঘরের তাপমাত্রা অত্যধিক গরম থাকলে গলার পেছনের অংশ শুকিয়ে যেতে পারে, যার ফলে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভূত হয়।

৬. ধূমপান বা ধোঁয়াযুক্ত পরিবেশে বেশি সময় কাটালে গলার মিউকাস ঝিল্লির ক্ষতি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি গলা ব্যথার কারণ হতে পারে।

৭. যদি কেউ অত্যধিক চিৎকার করেন বা কণ্ঠস্বরকে অতিরিক্ত ব্যবহার করেন, তাহলে গলার পেশী ক্লান্ত হয়ে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

৮. গলা ব্যথা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় বা অন্যান্য গুরুতর উপসর্গের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

মদ্যপান বা ধূমপানের কারণে গলা বা ভোকাল কর্ডের টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা গলা ব্যথার কারণ হতে পারে।

গলা ব্যথার বিভিন্ন উপসর্গ

  • বমি হওয়া।
  • ঢোঁক গিলতে সমস্যা।
  • বার বার গলা ব্যথা হওয়া।
  • গলার দুইপাশে ফোলা গ্রন্থি।
  • অতিরিক্ত মাথা ব্যথা করা।
  • গলা ব্যথা মরাত্মক আকার ধারণ করা।
  • গলার টনসিল ফুলে লালচে হয়ে যাওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া।
  • অনেক সময় গলায় বা টনসিলে পুঁজও হতে পারে।
  • ৬ মাসের নীচে বয়সী শিশুদের জ্বর ১০১ ফারেনহাইট এবং বড়দের ক্ষেত্রে তা ১০৩ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে যাওয়া।

এগুলি হল কিছু উপসর্গ এবং কোনো কোনো সময় আপনি এগুলির মধ্যে কোনো একটি অনুভব করতে পারেন অথবা সবক’টি অনুভব নাও করতে পারেন। যদি একের বেশী উপসর্গ এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে থাকে, তবে আপনার অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিৎ। বিশেষজ্ঞের মতে, বছরে যদি ৪ থেকে ৫ বারের বেশি টনসিল ইনফেকশন হয় তাহলে অপারেশন করাতে হবে।

গলা ব্যথার চিকিৎসা

লা ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণের ওপর। সাধারণ গলা ব্যথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কয়েক দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে উপসর্গগুলো সহজে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু ঘরোয়া এবং চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। নিচে কিছু কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:
১. ঘরোয়া প্রতিকার

  • গলা ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকারের জন্য বেশিরভাগ লোক আদা ব্যবহার করে। আদা বাতজনিত সমস্যাতেও বহু শতাব্দী ধরে ভেষজ প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
  • আদা চা, মধু মিশ্রিত চা বা লেবু চা গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া, স্যুপ বা গরম পানি গলার শুষ্কতা দূর করে।
  • ঘরের বাতাস শুষ্ক হলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে আর্দ্রতা বৃদ্ধি করা গলা শুষ্কতা ও ব্যথা কমাতে সহায়ক।
  •  গলা মসৃণ করার জন্য কফ সিরাপ বা মধু ও লেবু লজেঞ্জস ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • গলা পরিষ্কার রাখতে এবং প্রদাহ কমাতে লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা খুবই কার্যকর।

২. ঔষধ সেবন( আরও জানুন )

  • প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেনের মতো ঔষধ গলা ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে কার্যকর।
  • যদি গলা ব্যথা অ্যালার্জি বা এলার্জিজনিত প্রদাহের কারণে হয়, তবে অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ উপকারে আসতে পারে।
  • যদি গলা ব্যথার কারণ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ (যেমন স্ট্রেপ থ্রোট) হয়, তাহলে ডাক্তার এন্টিবায়োটিক ঔষধের পরামর্শ দিতে পারেন।

৩. জীবনযাপনের পরিবর্তন

  • মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে গলা শুষ্ক হতে পারে, তাই নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
  • ধূমপান বা দূষিত পরিবেশে থাকা গলা ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং কথা বলা কমিয়ে কণ্ঠস্বর বিশ্রামে রাখা দ্রুত আরোগ্য লাভে সাহায্য করে।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ

যদি গলা ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, গিলতে কষ্ট হয়, জ্বর বা অন্যান্য গুরুতর উপসর্গ থাকে, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ডাক্তার সংক্রমণের ধরন অনুযায়ী ঔষধ বা অন্যান্য চিকিৎসা পরামর্শ দিতে পারেন।

গলার সংক্রমণ নিয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQs)

১. কী করলে গলা ব্যথা দ্রুত কমে?

গলার ব্যথা দ্রুত কমানোর অন্যতম কার্যকর উপায় হলো লবণ পানিতে গার্গল করা। এটি গলার টিস্যুর ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এছাড়াও, গরম চা বা স্যুপ, মধু ও লেবুর মিশ্রণ গ্রহণ গলার অস্বস্তি কমাতে পারে। গলা ব্যথা থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে ঘরোয়া প্রতিকারগুলো অনুসরণ করা সহায়ক।

২. গলা ব্যথার জন্য কখন ডাক্তার দেখানো উচিৎ?

ভাইরাসজনিত গলা ব্যথা সাধারণত পাঁচ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে, যদি গলার সংক্রমণে ঠাণ্ডা বা ফ্লুর অন্যান্য উপসর্গ না থাকে এবং গলা ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ডাক্তার দেখানো জরুরি। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ (যেমন স্ট্রেপ থ্রোট) হলে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ প্রয়োজন, যা শুধুমাত্র একজন চিকিৎসকই নির্ধারণ করতে পারেন।

৩. কেন আমার কেবল গলা ব্যথা আছে, অন্য কোনো উপসর্গ নেই?

যদি আপনার শুধুমাত্র গলা ব্যথা থাকে এবং অন্য কোনো উপসর্গ না দেখা যায়, তবে এটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত গলার সংক্রমণ প্রায়শই স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘটে, যা সাধারণত গলার ব্যথা সৃষ্টি করে তবে ঠাণ্ডা বা জ্বরের মতো অন্যান্য উপসর্গ সৃষ্টি করে না।

৪. ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট গলা ব্যথার মধ্যে পার্থক্য কীভাবে করবেন?

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত গলা ব্যথার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা কিছুটা জটিল, তবে কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করা যায়:

  • ভাইরাস সংক্রমণ: সাধারণত গলা ব্যথার পাশাপাশি জ্বর, কাশি, ফ্লু-এর মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
  • ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: কেবল গলা ব্যথা হতে পারে, এবং ঠাণ্ডার অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায় না। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে প্রায়শই অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়।

উদাহরণস্বরূপ, স্ট্রেপ থ্রোট একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যা গলা ব্যথা সৃষ্টি করে কিন্তু সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দেখা দেয় না। পরীক্ষার জন্য গলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এই পার্থক্য নির্ধারণ করা হয়।

৫. গলা ব্যথা কতদিন থাকে?

  • ভাইরাল সংক্রমণ: সাধারণত গলা ব্যথা তিন থেকে পাঁচ দিন স্থায়ী হয়।
  • ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: এই ধরনের সংক্রমণ প্রায়ই দশ দিন বা তার বেশি সময় ধরে থাকতে পারে এবং এর জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।

এই পোস্ট শুধুমাত্র তাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ যারা গলা ব্যথা নিয়ে অনলাইনে এসে ঢোক গিলতে গলা ব্যথার ওষুধ নাম জানার জন্য অনুসন্ধান করছিলেন। অতএব এই পোস্ট বেশি শেয়ার করে দিন (গলা ব্যথার ঔষধ নাম)। ধন্যবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top