গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ

একটি নতুন জীবনের শুরু সবসময়ই আনন্দের এবং কৌতূহলের। অনেক নারী গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই নিজের শরীরে কিছু পরিবর্তন অনুভব করেন। যদিও এই সময়টি খুবই প্রাথমিক, তবে শরীরে ঘটে যাওয়া কিছু পরিবর্তন থেকেই বোঝা যায় যে নতুন জীবনের শুরু হয়েছে। গর্ভাবস্থার লক্ষণ হল কিছু শারীরিক পরিবর্তন। সাধারণত সবচেয়ে সুস্পষ্ট লক্ষণ হল মাসিকের অনুপস্থিতি (অ্যামেনোরিয়া)। আবার কিছু কিছু মহিলা গর্ভাবস্থা জুড়ে রক্তপাত অব্যাহত রাখে। এখানে শুরুর দিকে গর্ভাবস্থার কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। বেশিরভাগ মহিলার গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি ভিন্ন রকম ভাবে অনুভব করতে পারে।

পিরিয়ড মিস হওয়ার কাছাকাছি সময়ে বা এক দুসপ্তাহের মদ্ধে কিছু গর্ভধারণের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। গর্ভধারণের ৬ সপ্তাহের মদ্ধেই প্রায় ৬০ ভাগ মহিলার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয় এবং ৮ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ মহিলা এসব লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। আজকের এই লেখায় আমরা গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এখানে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহের এই ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো চিনতে পারবেন, যাতে আপনি নিজেকে এবং আপনার বাচ্চাকে শুরু থেকেই যত্ন নিতে পারেন।

গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ

গর্ভাবস্থার লক্ষণ হল কিছু শারীরিক পরিবর্তন। সাধারণত সবচেয়ে সুস্পষ্ট লক্ষণ হল মাসিকের অনুপস্থিতি (অ্যামেনোরিয়া)। আবার কিছু কিছু মহিলা গর্ভাবস্থা জুড়ে রক্তপাত অব্যাহত রাখে। এখানে শুরুর দিকে গর্ভাবস্থার কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। বেশিরভাগ মহিলার গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি ভিন্ন রকম ভাবে অনুভব করতে পারে। যেমন:

১. চরম ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন।

২. স্তনের আকার বড়ো হয়ে যাওয়া এবং স্তনের বোঁটা বেশি কালো হয়ে যাওয়া।

৩. বমি বা বমি বমি ভাব অনুভব করতে পারেন (যাকে মর্নিং সিকনেসও বলা হয়)।

৪. শরীরে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এবং জরায়ু বাড়তে থাকায় মাত্রারিক্ত প্রস্রাবের বেগ অনেক বাড়তে পারে।

৫. প্রিয় কোনো খাবারে অরুচি কিংবা নতুন কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

৬. পেট ফুলেযাওয়া।

৭. স্তনের চারপাশের ত্বক কালো হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যারিওলাও বলা হয়)।

৮. অনেক সময় গর্ভধারণের প্রথম থেকেই বুক ভারী এবং সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

৯. প্রথম সপ্তাহে শরীরে হরমোনের উচ্চমাত্রার কারণে কিছু নারী ক্লান্তি এবং হালকা মাথাব্যথা অনুভব করতে পারেন।

১০. প্রথম সপ্তাহেই কিছু নারী মেজাজ পরিবর্তন বা ‘মুড সুইং’ লক্ষ্য করতে পারেন।

১১. প্রোজেস্টেরন হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়, যার ফলে বুক বা পেটে হালকা জ্বালাপোড়া দেখা যেতে পারে।

১২. অনেকের ক্ষেত্রে কিছুটা ওজন বৃদ্ধি দেখা যায়।

১৩. সাদা স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।

১৪. প্রিয় কোনো খাবারে অরুচি কিংবা নতুন কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

এই সমস্ত লক্ষণগুলি গর্ভাবস্থার ইঙ্গিত নাও হতে পারে, বরং অন্য একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। একটি গর্ভাবস্থা পরীক্ষা আরও সঠিক ফলাফল প্রদান করতে পারে।

গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি কবে থেকে বোঝা যায়?

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে না। গর্ভবতী হওয়ার প্রথম ১ মাস (বা ৪ সপ্তাহ) মায়েরা সাধারণত বুঝতেই পারেন না যে তারা গর্ভধারণ করেছেন। কেন চার সপ্তাহ সময় লাগে? কারণ গর্ভবতী নারীর সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে তার গর্ভকালের শুরু ধরা হয় আর গর্ভধারণের প্রথম যে লক্ষণটি নজরে আসে তা হলো পিরিয়ড বাদ যাওয়া।

গর্ভাবস্থা পরীক্ষা কি?

গর্ভাবস্থা পরীক্ষা হলো একটা সহজ উপায় যা দিয়ে জানা যায় একজন মহিলা গর্ভবতী কিনা। এই পরীক্ষাটা মূলত প্রস্রাব অথবা রক্ত পরীক্ষা করে মানুষের শরীরে একটা বিশেষ হরমোন, যার নাম হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (hCG), আছে কিনা দেখে। এই hCG হরমোনটা তৈরি হয় যখন কোনো মহিলার ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়। এই হরমোন গর্ভধারণের প্রায় ১০ দিন পর প্লাসেন্টা থেকে তৈরি হতে শুরু করে। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে, প্রতি দুইদিনে এই hCG হরমোনের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়।

ডাক্তাররা রক্ত পরীক্ষা করে গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করতে। এটা খুবই নির্ভুল এবং গর্ভধারণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই গর্ভাবস্থা ধরা পড়ে। প্রস্রাব পরীক্ষা বাড়িতে করা যায়। বাজারে অনেক রকমের “প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট” পাওয়া যায়। মাসিক বন্ধ হওয়ার দুই সপ্তাহ পর এই পরীক্ষা করা যেতে পারে। বাড়িতে করা প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ৯৭% থেকে ৯৯% নির্ভুল। তবে সবসময় ডাক্তারের সাথে কথা বলা ভালো কারণ তারাই আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।

পরীক্ষা করার আগে নির্দেশাবলী ভালো করে পড়ে নিন। যদি টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসে কিন্তু আপনার মনে হয় আপনি গর্ভবতী, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। সঠিক সময়ে পরীক্ষা করলে ফলাফল বেশি নির্ভুল হবে।

মিলনের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়?

নিশ্চিত হওয়ার জন্য কোন ফার্মাসি থেকে প্রেগ্ন্যাসি কিট এতে চেক করে দেখতে পারেন। যদিও অতি কম সময়ে স্পষ্ট ভাবে কিটে দুটি দাগ দেখা নাও যেতে পারে। একটি দাগ স্পষ্ট হলেও আরেকটি ঝাপসা দেখা গেলে বুঝে নিবেন প্রেগ্ন্যাসি পজেটিব। গত পিরিয়ড অনুসারে পরবর্তী পিরিয়ডের তারিখ থেকে ১৫-২০ দিন পেরিয়ে গেলে তখন প্রেগ্ন্যাসি কিট দ্বারা চেক করবেন, সময় যত বাড়তে থাকবে দাগ দুটি ততই স্পষ্ট ফুটে উঠবে। অতি কম সময়ে দুটি অস্পষ্ট কিংবা নাও দেখতে পারেন।

আপনার যদি কোনো মাসের পিরিয়ড বাদ যায় এবং আপনি যদি এর আগের সময়ে অনিরাপদ সহবাস করে থাকেন, অর্থাৎ কোনো জন্মনিরোধক (কনডম, পিল বা বড়ি, ইনজেকশন) ব্যবহার না করে সহবাস করে থাকেন, সেক্ষেত্রে যখনই দেখবেন যে নির্দিষ্ট তারিখে পিরিয়ড শুরু হয়নি তখনি আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিতে পারেন।

পিরিয়ড শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখটি জানা না থাকলে অনিরাপদ সহবাসের কমপক্ষে ২১ দিন পরে টেস্ট করেও আপনি জেনে নিতে পারবেন আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি না। এ ছাড়া আজকাল অনেক উন্নত প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়, যার সাহায্যে গর্ভধারণের নয় দিন পরেই আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কি না তা জানা সম্ভব।

গর্ভবতী হলে করণীয় কী?

বাহ, অভিনন্দন! একটি ছোট্ট জীবন আপনার ভেতরে বেড়ে উঠছে, এটা কতই না আনন্দের! এই সময়টা খুবই স্পেশাল, আর নিজের যত্ন নেওয়াটাও খুব জরুরি। প্রেগন্যান্সি টেস্টে পজিটিভ দেখার পর, আপনার প্রথম কাজ হবে একজন ভালো গাইনী ডাক্তারের সাথে দেখা করা। ডাক্তার আপনাকে পরীক্ষা করে সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখবেন, আর আপনার জন্য কিছু পরামর্শও দেবেন। এই সময়টাতে ডাক্তাররা সাধারণত কিছু জিনিসের উপর জোর দেন, যেমন:

  • ফলিক এসিড: গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাস বা ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড খাওয়া খুব জরুরি। এটা আপনার বাচ্চার স্পাইনাল কর্ড ঠিকভাবে গঠনে সাহায্য করে। ফলিক এসিড ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়।
  • ভিটামিন ডি: শক্ত হাড়ের জন্য ভিটামিন ডি খুবই জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খেতে পারেন।
  • খাবার: এই সময়টাতে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু কম থাকে, তাই কাঁচা বা ভালোভাবে রান্না না করা খাবার এড়িয়ে চলুন। সবসময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যাতে আপনার আর বাচ্চা, দুজনেরই শরীর ভালো থাকে।
  • কিছু বদ অভ্যাস ত্যাগ: ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি, আর অ্যালকোহল বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। তাই এইসব একেবারেই বাদ দেওয়া উচিত।

মনে রাখবেন, এই নয় মাস আপনার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায়। তাই নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখুন, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন, আর এই সুন্দর সময়টার আনন্দ উপভোগ করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top