ছয় মাসের শিশুর সর্দি-কাশি হলে এটি সবার জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুর ইমিউন সিস্টেম কম থাকার কারণে ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা যায়।কোলের শিশুদের ঘন ঘন সর্দিকাশি হতেই থাকেl শিশুরা ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় এবং সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়। সাধারণত শিশুর লক্ষণগুলি 5-7 দিনের মধ্যে কমে যাবে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সর্দি-কাশির কারণ
সর্দি-কাশি সাধারণত ভাইরাসজনিত হয়। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেরিতে তৈরি হয় বলে তারা সহজেই সংক্রমিত হতে পারে। ঠান্ডা বা সংক্রমণ (রাইনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা),পরিবেশে ধুলা, ধোঁয়া বা অ্যালার্জেন এবং ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব।
ছয় মাসের শিশুর ঠান্ডা কাশি হলে করণীয়
ঠান্ডার সময় আপনার শিশুর সর্দি-কাশি হওয়া থেকে শুরু করে নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া শুরু হয়। এতে করে সর্দি জমে থাকার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। আপনার শিশুর সর্দি-কাশি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ওষুধ ব্যবহার না করে আপনার একটু যত্নই তাদের সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি হতে পারে।
• শিশুর আরাম নিশ্চিত করা।
• শিশুকে প্রতিদিন রোদে রাখতে হবে। রোদে ভিটামিন ডি শিশুর শরীরে ঢুকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
• শিশুকে ঠান্ডা পরিবেশে রাখবেন না।
• শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো। মায়ের দুধে অ্যান্টিবডি থাকে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
• শিশুকে গরম কাপড় পরানো।উষ্ণ কাপড় মাধ্যমে শিশুকে সঠিকভাবে ঢেকে রাখুন যেন সে ঠান্ডা অনুভব না করে।
• ডাক্তারের পরামর্শে শুধুমাত্র শিশুদের জন্য নির্ধারিত ওষুধ ব্যবহার করা।
• শিশুর নাক সর্বদা পরিষ্কার রাখা।
• নাকে স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করা। নাকে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে। এটি নাকের সর্দি পরিষ্কার করে শ্বাস নিতে সহায়তা করে।
• সর্দি-কাশি আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
• নাক বন্ধর জন্য নাসাল অ্যাসপিরেটর ব্যবহার করা যেতে পারে। মৃদুভাবে সর্দি টেনে বের করার জন্য নাসাল অ্যাসপিরেটর ব্যবহার করা হয়।
• শিশুকে নিজ থেকে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক বা ঠান্ডা-কাশির সিরাপ দেবেন না।
• আশেপাশে পরিবেশের মান স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হবে।
• হিউমিডিফায়ার ব্যবহার মাধ্যমে ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখলে শিশুর শ্বাস নিতে সুবিধা হবে।
• ধুলো ও ধোঁয়ামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। শিশুর আশপাশ ধুলোমুক্ত এবং কোনো রকম আশেপাশে ধূমপান করা যাবে না।
• শিশুকে বাষ্প গ্রহণের ব্যবস্থা করা। গরম পানির বাষ্প শ্বাসের সমস্যা কমাতে পারে। তবে শিশু যেন খুব কাছাকাছি না থাকে।
• উষ্ণ পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মালিশ।শিশুর বুকে এবং পিঠে উষ্ণ পানির কাপড় দিয়ে আলতো করে মালিশ করা যেতে পারে।
• প্রয়োজনীয় টিকা সময়মতো দিন।
• পর্যাপ্ত তরল সরবরাহ ব্যবস্থা করা। শিশুর দেহ হাইড্রেটেড রাখতে মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দিতে হবে।
• শিশুর চারপাশ পরিষ্কার রাখুন।• জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ইলেক্ট্রোলাইট সমাধান দিতে পারেন।
সর্দি-কাশি প্রতিরোধ করণীয়
সর্দি এবং কাশি প্রতিরোধ করা কঠিন কারণ এগুলি খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে বাচ্চাদের প্রায়শই অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।
- পরিবারের কোনো সদস্যের সর্দি-কাশি থাকলে তাদের সঙ্গে কোন কিছু শেয়ার না করা।
- সর্দি-কাশি ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে হাঁচি, নাক ফুঁক এবং কাশি দেওয়ার পরে ঘন ঘন হাত ধোয়া।
- কাশি ও হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখুন।
- কাপর ব্যবহার করে এবং সঠিকভাবে ধুয়ে ফেলা এবং আপনি যদি টিস্যু ব্যবহার করেন তবে তা সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিন।
- শিশুদের পুষ্টিকর খাবার খেতে দিন এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে দিন।
কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?
খাওয়া বন্ধ করে দিলে বা খাবারে অনিহা দেখা দিলে। প্রচুর বমি হলে,সর্দি-কাশি দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে,শিশুর নখ বা ঠোঁট নীলচে হয়ে গেলে,উচ্চমাত্রার জ্বর হলে,শিশুর শ্বাসপ্রশাস নিতে সমস্যা হলে।
উপসংহার
শিশুদের মধ্যে সর্দি এবং কাশি হল সবচেয়ে সাধারণ অবস্থা যা নিজেই স্থির হয়ে যায় এবং কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। একটি ভাল পরিমাণ বিশ্রাম, ঘুম এবং ভাল খাওয়া তাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র যদি বাসায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়ার পরও উপসর্গগুলি দূর না হয়ে যায়, বা সেগুলি গুরুতর হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত। এই নির্দেশনাঅনুসরণ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুর সর্দি-কাশি দ্রুত সেরে যায়। তবে সমস্যা বাড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।