ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ।এখানে শরীরের রক্তে বা প্রসাবে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। শরীরে যখন ইনসুলিন নামক হরমোন সঠিকভাবে উৎপন্ন করতে পারে না বা উৎপন্ন ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করে না তখন এ রোগ দেখা যায়। ইনসুলিন নামক হরমোন রক্তের গ্লুকোজ কে কোষে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে গ্লুকোজ কে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে শর্করা জমতে থাকে যা বিভিন্ন জটিল রোগ সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর ৯৭ শতাংশই টাইপ-২। এটি প্রতিরোধযোগ্য এবং সহজ টিপস মেনে চললে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিস চার প্রকার, যথা: টাইপ 1 ডায়াবেটিস । টাইপ 2 ডায়াবেটিস । গর্ভকালীন ডায়াবেটিস । তরুণদের পরিপক্কতা শুরু ডায়াবেটিস (MODY)। অতএব ডায়াবেটিস এর লক্ষণগুলো কি কি আজকের এই সম্পূর্ণ পোস্ট দ্বারা বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই পোস্ট বিস্তারিত পড়ে নিন।
কোন ব্যক্তির ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি
১. যাদের বংশে, যেমন: মা-বাবা সম্পর্কিত নিকট আত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে।
২. যারা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কোন কাজ করে না।
৩. যাদের ওজন বেশি বা মেদবহুল।
৪. দীর্ঘদিন যারা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করে।
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ
ডায়াবেটিস একটি জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ। ডায়াবেটিস রোগীর লক্ষণ ব্যক্তি বিশেষ ভিন্ন হতে পারে। রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। নিম্নে ডায়াবেটিস রোগের কিছু লক্ষণ দেয়া হলো:
• খুব বেশি পিপাসা লাগা।
• ঘন ঘন প্রসাব লাগা বিশেষ করে রাতে ঘনঘন প্রসাব হওয়া।
• বেশি ক্ষুধা লাগা। অতিমাত্রায় শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করা।
• শরীরে কোথাও ক্ষতের সৃষ্টি হলে দেরিতে শুকানো।
• যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া।
• সামান্য পরিশ্রমে দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করা।
• চোখে ঝাপসা দেখা।
• চামড়া শুকিয়ে যাওয়া
• শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে অবশ অনুভূতি বা ঝিনঝিন করা।
• অযথা বিরক্তি বা মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
• মাড়িতে সংক্রমণ হওয়া বা রক্তক্ষরণ হওয়া।
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার
ডায়াবেটিস রোগকে দমিয়ে রাখতে হলে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে খাবার। কেবলমাত্র ওষুধ খেয়ে ডায়বেটিস রোগ কখনোই কমিয়ে রাখা যায় না। তাই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস রোগে অসামান্য অবদান রাখে। নিয়ন্ত্রিত খাদ্য ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধ সেবন করেও ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। রোগীকে এমন খাদ্যদ্রব্য দিতে হবে যা তার ন্যূনতম ক্যালোরি চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এই খাদ্যর দ্বারা রক্তে বা প্রসাবে যাতে শর্করা বৃদ্ধি না পায়। ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ তিনভাবে করা যায়। যথা: খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ওষুধ সেবন এবং শৃংখলা।
নিয়ন্ত্রিত ও উপযুক্ত খাদ্য
- ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার খাদ্য নিয়ন্ত্রণ। মোটা ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হলে তাদের ওজন স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া নিষেধ।
- ডায়াবেটিস রোগীদের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়। যেমন: বরবটি, ডাল, টোফু, সয়া ডিম, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস, গারো সবুজ শাকসবজি, মাশরুম, বাদাম ইত্যাদি এবং শ্বেতসার কম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়।
- প্রচুর পানি পান করতে হবে। কারণ শরীল হাইড্রেটেড থাকলে পানি শরীর থেকে অতিরিক্ত শর্করা বের করতে সাহায্য করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- স্বাস্থ্যকর চর্বি শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান এবং এটি দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখে। যেমন: মাছের তেল, অ্যাভোকাডো, বাদাম ইত্যাদি।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে হবে কারণ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রক্তে শর্করার বৃদ্ধির গতি কমিয়ে আনে। যেমন: শাক সবজি, ফল, বাদাম, ওটমিল, ব্রাউন রাইস ইত্যাদি
- ডায়াবেটিস রোগীদের প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন: ফাস্টফুড, চিপস ইত্যাদি জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।
- লাল মাংস, ফুল ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার, এবং ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার এড়ানো উচিত, কারণ এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়।
- একবারে বেশি খাবার একত্রে না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাবার অভ্যাস করতে হবে।
- লবণ খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। লবণ উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ।
ঔষধ সেবন
সব ডায়াবেটিস রোগীকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। অনেক সময় বয়স্ক রোগীদের এই দুটি নিয়ম মেনে চললেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু ইনসুলিন নির্ভর রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইনজেকশন এর দরকার হয়। ঔষধ সঠিকভাবে না নিলে বা ঔষধ গ্রহণে গাফিলতি হলে ডায়াবেটিসের জটিলতা যেমন কিডনি সমস্যা, চোখের রোগ, হৃদরোগ, স্নায়ুজনিত সমস্যা এবং পায়ে সংক্রমণ বা আলসার হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঔষধ সঠিকভাবে এবং নিয়মিত সেবন করা উচিত। কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে যা জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়তা করে।
জীবন শৃঙ্খলা
জীবন শৃঙ্খলা মেনে চলা ডায়াবেটিস রোগীদের একটি অন্যতম কাজ। নিম্নে কিছু বিষয়ে ডায়াবেটিস রোগীকে সর্বদা মেনে চলতে হয়।
- সর্বদা নিয়মিত এবং পরিমিত ব্যায়াম করতে হবে।
- নিয়মিত পরিমাণমতো সুষম খাবার খেতে হবে।
- নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরিমাপ করতে হবে।
- মিষ্টি খাওয়া সম্পূর্ণ ছেড়ে দিতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার পরিকল্পনা করতে একটি পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উত্তম, কারণ প্রত্যেক ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন হতে পারে।
শেষ কথা
মনে রাখবেন, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সর্বদাই উত্তম, এবং এই জীবনধারার পরিবর্তনগুলি শুধুমাত্র আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে না বরং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উন্নতি করতে পারে। সচেতনতার চেয়ে বড় দাওয়াই আর নেই। আশা করতেছি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেল আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ