বর্তমান সময়ে গ্যাসের সমস্যাটি প্রায় সকলেরই দেখা দিয়েছে আর এই সমস্যাটিতে অধিকাংশ লোকই ভুগছেন। গ্যাসের সমস্যাটিতে যারা ভুগছেন তারাই জানে এটির যন্ত্রণা কেমন। আমাদের এই সমস্যা হওয়ার প্রধান কারণ হলো হোটেল অথবা দাওয়াত এবং পার্টিতে মসলাযুক্ত খাবার খেলে শুরু হয়ে যায়। দাওয়াতে গেলে বিভিন্ন প্রকার মসলাযুক্ত খাবার এর পাশাপাশি অনেক ধরনের ভাজা খাবার ও তেলাক্ত খাবার খাওয়া হয় তাই এই ধরনের সমস্যা বা গ্যাসের সমস্যা হয়।
আজকাল অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। অনিয়মিত খাওয়ার রুটিন, ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবারসহ নানা কারণে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন ছেলে-বুড়ো সবাই। এর লক্ষণ হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই আমরা দেখি পেট ফাঁপা, বুক ও গলা জ্বালাপোড়া করা এবং বদহজম। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই সমাধান খোঁজেন ওষুধে। কিন্তু প্রথম দিকে ওষুধ কাজ করলেও পরবর্তী সময়ে ওষুধ আর তেমন কাজে দেয় না।
পেটে গ্যাস হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়। পেটে গ্যাস সাধারণত খাদ্য গ্রহণ কিংবা পানি পান করার সময় বাতাস পেটের ভেতরে প্রবেশ করার কারণে হয়ে থাকে। অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত বৃদ্ধি, খাদ্যে বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেও পেটে গ্যাস হয়ে থাকে। এছাড়া এমন কিছু খাদ্য রয়েছে, যেমন- সিম, মটর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ ইত্যাদি খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস হয়ে থাকে।
আরও জানুন: গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা
পেটে গ্যাস হওয়ার লক্ষণ
আসুন জেনে নেই, পেটে গ্যাস হওয়ার কিছু লক্ষণ:
১. পেট ব্যথা, খিঁচুনি এবং একটি গিট মতো অনুভূত হয়।
১. আহার গ্রহণ না করলেও পেট ভরা ভরা লাগে এবং পেট ফোলা অনুভূত হয়।
৩. পেটের আকার বৃদ্ধি পায়।
৪. পায়ুপথে গ্যাস বের হয়।
৫. ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে অন্ত্রে অতিরিক্ত গ্যাস জমলে বুকের ডান পাশে ব্যথা অনুভূত হয়।
পেটের গ্যাস দূর করার ৮ টি সহজ ঘরোয়া উপায়
গ্যাস সমস্যা দূর করার জন্য ঘরোয়া কিছু উপায় যেগুলো আমরা প্রয়োগ করলে গ্যাস পেট ব্যথা বুক জ্বালাপোড়া ইত্যাদি থেকে আমরা সহজে বাঁচতে পারব তা হল:
১. পানি
অ্যাসিডিটির জ্বালাপোড়া, পেট ফাঁপার সমস্যা থেকে বাঁচতে পানি পান করুন প্রচুর পরিমাণে। অ্যাসিডিটি হলে পানি পান করলে পেটের গ্যাস বের হয়ে আসতে পারে এবং অস্বস্তিভাব দূর হয়। আর যদি আপনি নিয়মিত প্রয়োজনীয় পানি পান করেন, তাহলে আপনার অ্যাসিডিটির সম্ভাবনাও কমে যাবে। কারণ, আমাদের হজম ও পরিপাকক্রিয়ায় পানি খুবই জরুরি একটি উপাদান। আর হজম ও পরিপাক যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে অ্যাসিডিটি এমনিতেও হবে না।
২. দই
গ্যাস কমানোর আরেকটি উপায় হল দই এর ভিতর এমন একটি উপাদান আছে যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং গ্যাস সমস্যাটি দূর করা সম্ভব হয়নি দই খাবারের মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি খাবার হজম হয়ে যায় তাতে আর কোন গ্যাসের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
৩. আদা
আদার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে দারুণ কার্যকরী। আদা কুচি করে সামান্য লবণসহযোগে চিবিয়ে খেলে অ্যাসিডিটি অনেকটাই উপশম হয়ে আসে। আবার চাইলে আদাকুচি পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানিও খেতে পারেন। তবে পরিমাণে খুব বেশি নয়, তা না হলে উল্টো আপনার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেকেই গ্যাস কমানোর সমাধান পেয়েছে।
৪. দারুচিনি
হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য আরেকটি ভালো উপাদান হলো দারুচিনি। দারুচিনির মাধ্যমে গ্যাস সমস্যা টি বা হজম সমস্যাটি সহজে দূর করা যায় আপনাদেরকে প্রথমে একই গ্লাস পানি তে আধা চামচ দারুচিনির গুঁড়ো দিয়ে পানি ফুটিয়ে নিতে নিতে হবে তারপর দিনে দুই থেকে তিনবার খেলেই যে সমস্যাটি ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে।
৫. শসা
শসা একটি ঠান্ডা ফল যা গরম দিনে খেলে আমাদের শরীর ঠান্ডা রাখে এবং শসা খেলে পেট ঠান্ডা রাখবে অনেকটাই কার্যকারী হয় শসার ভিতরে রয়েছে ফ্লেভানয়েড এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি যা আমাদের পেটের সমস্যা বা গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
৬. পুদিনাপাতা
অ্যাসিডিটির সমস্যায় দু–তিনটি পুদিনাপাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। চিবিয়ে খেতে খারাপ লাগলে এক কাপ পানিতে কয়েকটি পুদিনাপাতা দিয়ে সেদ্ধ করে পানিটা খেতে পারেন। বমিভাব, জ্বালাপোড়া দূর করে সতেজ ভাব আনতে পুদিনাপাতার জুড়ি নেই।
৭. মেথি
এক গ্লাস পানিতে এক চা–চামচ মেথিগুঁড়া মিশিয়ে খেলে অ্যাসিডিটির জ্বালাপোড়া অনেকাংশে কমে। অথবা এক চা–চামচ মেথি দানা এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেটা খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
৮. পেঁপে
পেঁপেতে থাকা প্যাপেইন অ্যানজাইম আমাদের হজমপ্রক্রিয়াকে সহজতর করে। ফলে অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা হতে পারে না। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতে পারেন দু–এক টুকরা পেঁপে।
পেটের গ্যাস দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রায় সবাই ব্যস্ত সারাদিন ছুটে চলি বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন জায়গাতে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া হয়না খিদে লাগলে আমরা যা খুশি তাই খেয়ে নিই সেখান থেকে উদ্ভব হয় তা নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার কারণে আমাদের অনেক সময় পেট ফাঁপা পেট ব্যথা এবং হজমের সমস্যা দেখা দেয়। আসুন জেনে নেই, রাতের বেলা এবং সকালের গ্যাস কমানোর কিছু কার্যকারী প্রাকৃতিক উপায়:
১. খাদ্য গ্রহণ এবং পান করার সময় কথা বলা পরিহার করুন। কারণ এতে পেটে বাতাস প্রবেশ করে।
২. চুইংগাম এবং শক্ত ক্যান্ডি খাওয়া পরিহার করুন।
৩. কার্বোনেটেড ও কোমল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন।
৪. বসে খাবার গ্রহণ করুন এবং ধীরে ধীরে ভালো করে চিবিয়ে খান।
৫. চা-কফি ও ধূমপান পরিহার করুন।
৬. অল্প পরিমাণ হলেও ঘন ঘন খাবার গ্রহণ করুন।
৭. নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করতে পারেন যা আপনার পেটের গ্যাস দূর করতে সাহায্য করবে।
৮. কাঁচা ও কম চিনিযুক্ত ফল, যেমন- ব্ল্যাকবেরি, ব্লুবেরি, আলু, পিচ, স্ট্রবেরি, তরমুজ এবং কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত সবজি, যেমন- মটরশুঁটি, গাজর, টমেটো, কলা ইত্যাদি গ্রহণ করুন। ইহা পেটের গ্যাস দূর করতে খুবই কার্যকরী।
সতর্কতা
আপনার পেটের ব্যথা যদি স্থায়ী ও তীব্র হয়, তাহলে বিলম্ব না করে অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। কারণ এই গ্যাস আপনার শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি এটি আপনার নার্ভাস সিস্টেমকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাছাড়া এপেন্ডিসাইটিস বা আলসারও দেখা দিতে পারে। সব ঘরোয়া উপাদান সবার জন্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি পেঁপে খেলে অ্যালার্জি দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই পেঁপে খাবেন না। মনে রাখবেন, এসব ঘরোয়া উপাদান কিংবা ওষুধ আমাদের অ্যাসিডিটি থেকে সাময়িক মুক্তি দিতে পারে। এই অস্বস্তিদায়ক সমস্যা থেকে সত্যিকারের মুক্তি পেতে চাইলে লাইফস্টাইল এবং ডায়েটে পরিবর্তন আনার কোনো বিকল্প নেই।
শেষ কথা
একবারে অনেক না খেয়ে কিছুক্ষণ পরপর অল্প অল্প করে খান, পেট খালি রাখবেন না। প্রয়োজন অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি পান করুন। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ভাজাপোড়া কিংবা অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস যদি ছাড়তে না পারেন, যতই ঘরোয়া দাওয়াই কিংবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন না কেন, অ্যাসিডিটি ঘুরেফিরে আপনার পিছু ছাড়বে না। সচেতনতার চেয়ে বড় দাওয়াই আর নেই। আশা করতেছি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে পেটের গ্যাস কমানোর উপায় সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেল আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ