ওজন কমাতে গত কয়েক বছর ধরে খুবই কার্যকরী একটি খাদ্য উপাদান হল চিয়া সিডস। নিয়মিত ভাবে চিয়া সিডস খেতে পারলে ওজন কমে। আর তাই বিশেষজ্ঞরাও বলেন রোজকার ডায়েটে চিয়া সিডস রাখতে। চিয়া সিডের মধ্যে থাকে ফাইবার প্রোটিন, হেলদি ফ্যাট, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং আরও কিছু স্বাস্থ্যকর উপাদান। ফাইবার আমাদের হজমে সাহায্য করে সেই সঙ্গে অন্ত্র ঠিক রাখতেও সাহায্য করে।
চিয়া সিড একটি গাছের বীজ। চিয়া বীজ হলসালভিয়া হিস্পানিকার ভোজ্য বীজ, একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ (Lamiaceae ) মধ্য ও দক্ষিণ মেক্সিকোতে অবস্থিত। বিভিন্ন পুষ্টিগণের সম্পন্ন এই বীজটি মরুভূমিতে উৎপন্ন হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এর সহজলভ্যতা রয়েছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই বীজটি ব্যবহার করে থাকে।
চিয়া সিড কি
চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের দানার মতো। চিয়া সিড (Chia Seed) হল চিয়া গাছের বীজ।এর বৈজ্ঞানিক নাম Salvia hispanica। এটি মূলত মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে। চিয়া বীজ আকারে ছোট, রঙের হয়ে থাকে। চিয়া সিড উচ্চমাত্রায় ওমেগা-৩, প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড গ্রহণের অনেক উপকারিতা রয়েছে। চিয়া সিড প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে। যা শরীরের হজম ক্ষমতা অত্যাধিক মাত্রায় বাড়িয়ে তোলে। চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর আঁশজাতীয় উপাদান, যা খেলে পেট ভরা থাকে। যার ফলে ক্ষুধা কম লাগে। ফাইবার জাতীয় খাবার হওয়ার কারণে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে সহায়তা করে থাকে। তবে ওজন কমাতে হলে এটি খাবার নিয়ম একটু ভিন্ন হয়। এটি খাবার পাশাপাশি ফাস্টফুড, চিনি,তেল জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। নিম্নে ওজন কমাতে সিয়া সিড খাওয়ার কিছু নিয়ম:
- এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ সিয়া সিড সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে উঠে খালি পেটে চিয়া সিড যুক্ত পানি খেতে হবে।খালি পেটে চিয়া সিড খেলে শরীরের মেটাবলিজম রেট অনেক বেড়ে যায় যা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- সারারাত ভিজিয়ে রাখা সম্ভব না হলে খাবার ২/৩ ঘন্টা আগে ভিজিয়ে খাওয়া যায়।
- বেশি উপকারিতা পেতে চাইলে এটির সাথে এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ মধু মিশিয়ে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে উঠে খালি পেটে খেলে অনেক বেশি উপকারিতা পাওয়া যাবে। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এই পদ্ধতি অত্যাধিক মাত্রায় শরীরের মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে দ্রুত ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে।
পানির পাশাপাশি এটি সালাদ,দই, স্মুতি, ওটস ইত্যাদির সাথেও খাওয়া যায়। দীর্ঘ দুই থেকে তিন মাস চিয়া সিড গ্রহন করলে এটি থেকে কার্যকরী একটি ফলাফল পাওয়া যায়। চিয়া সিড খাওয়ার সময় বেশি পানি পান করুন দীর্ঘ সময়ে এটি গ্রহণের ফলে ক্ষুধা মন্দা বেড়ে যায় এবং শরীরের ক্যালরি হ্রাস পায় যা দ্রুত ওজন কমিয়ে আনতে সহায়তা করে থাকে।
চিয়া সিড এর দাম
বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে এর দাম ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত ১ কেজি চিয়া সিড এর দাম ৫০০-৮০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
চিয়া সিড কোথায় পাওয়া যায়
চিয়া সিড যেকোনো বাজার, মুদি দোকান বা কনফেকশনারী বা বড় বড় স্টোরেজ যেমন: স্বপ্ন বিগবাজার, মিনা বাজার ইত্যাদি স্থানে সহজেই পাওয়া যায়। অনলাইনে সহজে অর্ডার করে চিয়া সিড পাওয়া যেতে পারে।
চিয়া সিড খাওয়ার সময়
সাধারণত এটি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। তবে সকালে খালি পেটে খেলে এটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া খাবার খাওয়ার আগেও এটি খাওয়া যায়। চিয়া সিড সারাদিন খাবার পানি সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
সিয়া সিড খাওয়ার পরিমান
সাধারণত প্রতিদিন ১০-২০ গ্রাম পর্যন্ত চিয়া সিড খাওয়া জেতে পারে। সাধারণত দৈনিক এক থেকে আড়াই টেবিল চামচ চিয়া সিড খাওয়া যায়। তবে এটি খাওয়ার সময় যথেষ্ট পরিমাণে পানি খাওয়া দরকার।
চিয়াসিড এর উপকারিতা
চিয়া সিডে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে। চিয়া সিডের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে চিয়া সিড সেবনের কিছু উপকারিতা নিম্নে দেওয়া হল:
• ওজন নিয়ন্ত্রণ : উচ্চ মাত্রায় ফাইবার থাকার কারণে এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। ক্ষুধা মন্দা তৈরি করে। দীর্ঘ সময় সেবনের ফলে শরীরের ক্যালরি হ্রাস করে। মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করে ওজন কমাতে সহায়তা করে।
• হার্টের রোগ: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের জন্য ভালো। ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করতে কাজ করে।চিয়া সিডে রয়েছে ওমেগা-৩ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। ফাইবার আর ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।কোয়েরসেটিন নামের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট যা চিয়া সিড এ অত্যাধিক মাত্রায় পাওয়া যায় যা হার্ট ভালো রাখতে সহায়ক।
• প্রদাহ বিরোধী প্রভাব: চিয়া বীজে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রদাহ-বিরোধী যা শরীরের প্রদাহ কমাতে উপকারী।
• শরীরের শক্তি বাড়ায়: এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ফাইবার থাকায় এটি শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়। দীর্ঘ সময়ের জন্য কর্মঠ ও উদ্যমী থাকা যায়।
• হাড়ের উপকারিতা: ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস এবং প্রোটিন আছে, যা হাড়ের জন্য উপকারী এবং হাড়কে শক্তিশালী করে। মাত্র ১ আউন্স চিয়া সিডে ১৮০ মাইক্রোগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। হাড় ছাড়াও অপটিমাল মাসল ও স্নায়ু ভালো রাখে চিয়া সিড।
• হজম শক্তি বৃদ্ধি: চিয়া সিডে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার থাকে। হজমে সহায়ক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
• অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে ফুড: অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে ভরপুর চিয়া সিড ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল শরীরের ডিএনএ ও জীবিত কোষ ধ্বংস করে। ফলে আপনি দ্রুত বুড়িয়ে যান। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি,অ্যালকোহল সেবন, ধূমপান, দূষিত পরিবেশ, ভাজাপোড়া খাবার, অনিদ্রা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, দুশ্চিন্তা—এসবের মাধ্যমে ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি হয়।
• রক্তে সুগার হ্রাস: চিয়া সিড হুট করে কার্বোহাইড্রেটকে রক্তের সঙ্গে মিশতে দেয় না। এই প্রক্রিয়াটা ধীর করে দেয়। চিয়া বীজ রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারে, যা ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন প্রতিরোধী। ফলে যাঁদের টাইপ–টু ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের জন্য চিয়া সিড উপকারী।
• ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী: চিয়া সিডের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।
• রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: চিয়া সিডে থাকা ফাইবার এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।