আয়রন সমৃদ্ধ খাবার ও এর অভাবজনিত লক্ষণ

আয়রন হল আমাদের দেহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ বজায় রাখার জন্য একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। একটি অপরিহার্য পুষ্টি হওয়ার অর্থ হল আমাদের শরীর প্রাকৃতিকভাবে এটি থাকে না, তাই আমাদের এই পুষ্টির প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবার থেকে পেতে হবে। এটি আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে আমাদের শরীরের প্রয়োজন পূরণ করতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে।

কি খেলে আয়রন বাড়বে

আয়রন শরীরে শক্তি উৎপাদন, অক্সিজেন পরিবহন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবারে আয়রন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই খাবারগুলোকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায় – প্রাণিজ এবং উদ্ভিজ্জ উৎস।

প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া আয়রন

• লাল মাংস (বিফ, মাটন) : লাল মাংসে প্রচুর পরিমাণ হিম আয়রন থাকে, যা সহজে শরীরে শোষিত হয়।
• পোলট্রি : মুরগি ও হাঁসের মাংস, গ্রীলের মাংসে অনেক আয়রন পাওয়া যায়।
• মাছ : বিশেষ করে টুনা,সালমন, সার্ডিন, এবং ট্রাউটের মতো তেলে সমৃদ্ধ মাছ আয়রনের একটি ভাল উৎস।
• অরগান মিট : যকৃতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা রক্তস্বল্পতা রোধে কার্যকর।

উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া আয়রন

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন সাদা রুটি, ভাত এবং পাস্তা,গম পণ্য,ব্রান এবং ওট সিরিয়াল,গমের পাউরুটি।
শরীরে আয়রন বাড়াতে সেরা আয়রন সমৃদ্ধ ফল এবং খাবারের মধ্যে রয়েছে- ডুমুর, খেজুর এবং কিসমিস, তুন্তগাছ, কালো জলপাই, prunes এবং prunes রস।
শাকসবজিতে প্রতিদিন খাওয়ার জন্য আয়রনের ঘাটতিযুক্ত খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে। ব্রোকলি,গাঢ় সবুজ শাক-সবজি যেমন পালং শাক এবং কলস, আলু, টমেটো, বাঁধাকপি।
আয়রনের জন্য সেরা খাবারের মধ্যে রয়েছে বীজ এবং বাদাম, যেমন:পেস্তা বাদাম, পাইন বাদাম, কুমড়ো বীজ, শণ বীজ, তিল বীজ, কাজুবাদাম।
ডাল ও শুঁটি জাতীয় ফসল- মুগ, মসুর, ছোলা, সয়াবিন ও বিউলিতে আয়রন থাকে।
সবুজ পাতাযুক্ত সবজি- পালং শাক, মিষ্টি কুমড়ার শাক, কেল এবং ব্রকলি আয়রনের ভালো উৎস।বিশেষ করে পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে।
শুকনো ফল- কিসমিস, খেজুর, এবং শুকনো এপ্রিকটে ভালো পরিমাণ আয়রন থাকে।
বাদাম ও বীজ- সূর্যমুখী বীজ,কুমড়োর বীজ এবং তিলের মধ্যে আয়রন পাওয়া যায়।
টফু ও টেম্পে- বিশেষ করে নিরামিষভোজীদের জন্য, এই সয়াবিন জাতীয় খাবারে উচ্চ পরিমাণে আয়রন থাকে।

শরীরে আয়রন এর চাহিদা

প্রতিদিনের আয়রনের চাহিদা বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়।

  • মহিলাদের ক্ষেত্রে- (১৯-৫০ বছর) পরিমাণ-১৮ সম/ফধু।
  • পুরুষদের ক্ষেত্রে- (১৯-৫০ বছর) পরিমাণ-৮ সম/ফধু।
  • গর্ভবতী মহিলাদের ২৭ সম/ফধু যা চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বৃদ্ধি পায়।
  • যেসব মায়েরা বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে ৯ সম/ফধু।

সাধারণত খাবারে পর্যাপ্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য থাকলে আয়রনের দৈহিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

আয়রনের অভাবের লক্ষণ কি কি

আমাদের শরীরের জন্য আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে এর ভূমিকা অপরিসীম। আয়রনের অভাবে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু লক্ষণ সম্পর্কে:

  • অবসাদ ও দুর্বলতা: সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগা, অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া? এগুলো আয়রনের অভাবের লক্ষণ হতে পারে।
  • ফ্যাকাশে ত্বক: আয়রনের অভাবে ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে। ঠোঁট, জিহ্বা ও চোখের ভেতরের অংশ ফ্যাকাশে দেখালে সাবধান!
  • চুল পড়া: চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে? আয়রনের অভাব চুল পড়ার অন্যতম কারণ।
  • শ্বাসকষ্ট: হাঁটাচলায় বা সিঁড়ি ভাঙায় হাঁপিয়ে যাচ্ছেন? আয়রনের অভাব হতে পারে।
  • মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা: ঘন ঘন মাথাব্যথা? আয়রনের অভাব এর জন্য দায়ী হতে পারে।
  • হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া: বুক ধড়ফড় করছে? আয়রনের অভাব হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে।
  • ঠাণ্ডা হাত-পা: হাত-পা ঠাণ্ডা থাকা আয়রনের অভাবের লক্ষণ।
  • নখ ভেঙে যাওয়া: নখ দুর্বল হয়ে ভেঙে যাচ্ছে? আয়রনের অভাব এর কারণ হতে পারে।
  • অস্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস: মাটি, চক ইত্যাদি খাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে? এটা আয়রনের অভাবের লক্ষণ।
  • মনোযোগের অভাব: পড়াশোনা বা কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না? আয়রনের অভাব আপনার মনোযোগ কমিয়ে দিতে পারে।

এই লক্ষণগুলো অন্যান্য রোগের কারণেও হতে পারে। তাই সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আয়রনের অভাব দূর করতে

  • আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল মাংস, ডিম, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি খান।
  • ডাক্তারের পরামর্শে আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।

শেষ কথা

আয়রনসমৃদ্ধ খাবার পেশী শক্তি এবং লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের জন্য জরুরি। কেননা আয়রনের অভাবে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে মিনারেলের অভাব দেখা দিলে আয়রনের ঘাটতিও দেখা দেয়। যেমন মাংস, সবুজ শাক-সবজি, ডাল, শুকনো ফল ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শে আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে আয়রনের অভাবজনিত সমস্যা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি আর্টিকেল আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top