হৃদপিন্ডের সংকোচন এবং প্রসারণ এর ফলে হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত ধমনীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ধমনী প্রাচীরে যে পার্শ্ব চাপ সৃষ্টি হয়, সেটাকে রক্তচাপ বলে। তাই রক্তচাপ বলতে সাধারণত ধমনীর রক্তচাপকে বোঝায়। রক্তচাপ হৃদপিন্ডের কার্যকারিতা, ধমনীর প্রাচীরের স্থিতিস্থাপকতা, এবং রক্তের ঘনত্ব ও পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। নিলয়ের সিস্টল অবস্থায় ধমনীতে যে চাপ থাকে,তাকে সিস্টোলিক রক্তচাপ এবং ডায়াস্টোল অবস্থায় যে চাপ থাকে, তাকে ডায়াস্টলিক রক্তচাপ বলে। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের সিস্টোলিক রক্তচাপ পারদ স্তরের ১১০-১৪০ মিলিমিটার (mm Hg) এবং ডায়াস্টলিক রক্তচাপ পারদ স্তরের ৬০-৯০ মিলিমিটার (mm Hg) হয়ে থাকে। ১২০/৯০ মিলিমিটার (mm Hg) স্বাভাবিক রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়।
উচ্চ রক্তচাপ একটি খুব সাধারণ অবস্থা। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনকে প্রভাবিত করে এবং বয়সের সাথে এর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। আফ্রিকান আমেরিকান এবং যারা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূল তাদের মধ্যে এটি বেশি সাধারণ।
দুই ধরনের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে: প্রাথমিক (প্রয়োজনীয়) উচ্চ রক্তচাপ, যার কোনো কারণ জানা নেই, এবং সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ, যা একটি অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থার কারণে হয়, যেমন কিডনি রোগ বা কিছু ওষুধ।
উচ্চ রক্তচাপ(Hypertension) কি?
উচ্চ রক্তচাপকে ডাক্তারি ভাষায় হাইপারটেনশন বলা হয়ে থাকে। শরীর ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার ওপরে অবস্থান করতে থাকে, তাহলে এই অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়ে থাকে। রক্তের চাপ যদি কম থাকে তাহলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলা হয়। এবং হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ হলো কোন ব্যক্তির রক্তের চাপ স্বাভাবিক এর চেয়ে বেড়ে যাওয়া। ১৪০/৯০ mmHg বা তার চেয়ে বেশি হলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়।উত্তেজনা, চিন্তা, বিষন্নতা, নিদ্রাহীনতা বা অন্য কোন কারণে যদি রক্তচাপ সাময়িকভাবে নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করে, তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা যাবে না। এবং তার জন্য বিশেষ কোনো ঔষধেরও প্রয়োজন নেই।
উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়
বিভিন্ন কারণে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা সৃষ্টি হয়।এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে জীবনযাত্রার ধরন ও খাদ্য অভ্যাস। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।অনেক সময় বংশীও কারণ জন্য উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হয়ে থাকে। তাছাড়া কিডনি বা হৃদরোগের জন্য উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা যায়। নিম্নে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টির কারণ দেওয়া হল:
• অস্থিরচিত্ত এবং মানসিক চাপগ্রস্ত থাকা।
• অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
• শারীরিক ওজন, মেদবহুল শরীর।
• অতিরিক্ত লবণ খাওয়া।
• অপর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম।
• রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
একাধিক লক্ষণ এর মাধ্যমে উত্তর রক্তচাপের লক্ষণ বোঝা যায়। আবার অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোন লক্ষণ দেখা যায় না। তাই এটিকে নীরব ঘাতকও বলা হয়ে থাকে। নিম্নে সাধারণ কিছু লক্ষণ দেওয়া হল-
• বমি বমি ভাব।
• মাথা ঘোরা।
• মাথা ব্যথা।
• ক্লান্তি ও দুর্বলতা।
• শ্বাসকষ্ট।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়
যদিও রক্তচাপ হওয়ার প্রকৃত কারণ জানা যায় না। তবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। উচ্চ রক্তচাপ যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তাহলে এটি বিভিন্ন মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে।নিম্নে কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো :
• সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।
• ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
• খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা।
• মানসিক চাপমুক্ত এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত জীবন যাপন করা।
• ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
• দৈনিক ৭/৮ ঘন্টা ঘুমানো।
• নিয়মিত ব্যায়াম করা। যেমন হাটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।
• ধূমপান বা অ্যালকোহল পরিহার করা।
• চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা। (ঘি, মাখন, চর্বিযুক্ত খাবার, গরু বা খাসির মাংস, চিংড়ি ইত্যাদি)
• পরিমাণের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ হতে বিরত থাকা।
শেষ কথা
উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক পর্যায়ে কোন উপসর্গ নেই, তাই আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে নিয়মিত চেক-আপ করা গুরুত্বপূর্ণ। এই চেক-আপের সময়, আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী আপনার রক্তচাপ পরিমাপ করবেন এবং ভবিষ্যতে আপনার উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি মূল্যায়ন করবেন। আশা করতেছি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেল আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ