দ্রুত কোমরের ব্যথা কমানোর ১০ ঘরোয়া উপায়

বর্তমান সময়ে ব্যাক পেইন বা কোমর ব্যথা এর জন্য কম বেশি সবাই ভুগে থাকেন। কোমর ব্যাথা বা লো-ব্যাক পেইন খুবই ভয়ানক একটি রোগ। শরীরের অন্যান্য মাংসপেশির চেয়ে কোমরের পেশিগুলো সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত, তাই এগুলো সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর কারণ হলো এসব মাংসপেশি শরীরের অন্যান্য স্থানের মাংসপেশির তুলনায় খুব ঘনঘন ঢিলে ও সংকুচিত হয়। কোমর ব্যথা বলতে সচরাচর ‘লো ব্যাক পেইন’ বোঝায়। স্বল্পমেয়াদি ব্যথা এক মাসের কম সময় থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রোনিক ব্যথা এক মাসের অধিক সময় থাকে। কোমরে ব্যথার ধরনের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসকরা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট (আরও জানুন), ব্যথার ট্যাবলেট (আরও জানুন), মলম এবং বেল্ট (আরও জানুন) ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে থাকেন।

শতকরা ৯০ শতাংশ লোক জীবনের কোনো না কোনো সময়ে কোমর ব্যথায় ভোগে। কোমর ব্যাথার সাধারনত কোমড়ের নিচের অংশের ব্যাথাকে কোমড় ব্যাথা বলা হয়। কোমর ব্যাথা মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে দিকে হতে পারে। মাঝে হতে পারে অথবা মেরুদন্ডের দুই পাশেও হতে পারে। পয়ঃনিষ্কাশনের উপরের রাস্তায় হতে পারে। । উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে রোগী দুই মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। আজকে আমরা কোমর ব্যথা কেন হয়, কোমর ব্যথা কারণ, কোমর ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

কোমর ব্যথা কি এবং কারণ

কোমরের ব্যথা (Lower Back Pain) হল কোমরের নিচের অংশে ব্যথা, যা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। কোমর ব্যথার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। পরিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে কোমর ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। কোমরের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যা কখনও কখনও খুব সাধারণ বা কখনো কখনো গুরুতর সমস্যার ফলে হতে পারে। কোমরের ব্যথার প্রধান কারণগুলো হল:

  • কোমরের অস্থিসন্ধিতে আর্থ্রাইটিস বা অস্থির ক্ষয় দেখা যাওয়া বয়স্কদের মধ্যে কোমরের ব্যথার একটি সাধারণ কারণ। বিশেষত অস্টিওআর্থ্রাইটিস অস্থিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।
  • খারাপ ভঙ্গিতে বসা, দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা এবং ব্যায়াম না করা বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে কোমরে চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান করা কোমরের ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলি মেরুদণ্ডকে নমনীয়তা দেয়। এই ডিস্কগুলি সরে গেলে, চাপ বা ব্যথা হতে পারে।
  • পিএলআইডি পূর্ণরূপ হলো Prolapsed Lumbar Intervertebral Disc, যা কোমরের ডিস্কের সমস্যা। এটি তখন ঘটে যখন মেরুদণ্ডের লাম্বার অঞ্চলে (কোমরের অংশে) ডিস্কের অভ্যন্তরীণ অংশ ডিস্কের বাইরের অংশ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। এর ফলে ডিস্ক স্থানচ্যুত হয় এবং কাছাকাছি স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলে, যা কোমরের ব্যথা বাড়ায়।
  • অস্টিওপোরোসিস বা অস্থি পাতলা বা দুর্বল হয়ে গেলে, মেরুদণ্ডের হাড় দুর্বল হয়ে কোমরে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম, ভারী কিছু তোলা এবং হঠাৎ করে শরীরের ভঙ্গি পরিবর্তন করার ফলে কোমরের মাংসপেশী টান পড়ে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • মেয়েদের প্রস্রাবে ইনফেকশন,কিডনির সমস্যা, বা টিউমার,ক্যান্সার, এইডস, অস্টিওপোরোসিস সেই সাথে দীর্ঘকাল স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনের ফলেও কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে।

কোমর ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

কোমরের ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে ব্যথার কারণ এবং ব্যথার তীব্রতার উপর।কোমরের ব্যাথা কমানোর জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করলে খুব সহজে কোমরের ব্যথা সারানো সম্ভব। তবে, যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। পাশাপাশি কোমর বা পিঠের ব্যথা সারাতে ঘরোয়া কয়েকটি উপায় অনুসরণ করতে পারেন। আমরা কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে কিভাবে কোমর ব্যথা কমানো যায় তার সম্পর্কে জানবো।

১. বিশ্রাম

>> এক সময় দেখা গেছে বেড রেষ্ট ছিল ব্যাক পেইনের সবথেকে বড় চিকিৎসা।ব্যথা কিছুটা উপশম হলে আপনি আপনার দৈনিক কার্যক্রম শুরু করেন।

২. অতিরিক্ত ওজন এড়ানো

>> অতিরিক্ত ওজন কোমরের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।

৩. তাপ বা ঠান্ডা থেরাপি

>> ব্যথার প্রথম দিকে বরফ দিতে পারেন। বরফ ব্যথা ও ফোলাভাব কমায়।৪৮ ঘণ্টা পরে,গরম সেক, গরম পানির ব্যাগ বা হট প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ব্যাথাজনিত স্থানে ম্যাসাজ দিলে ব্যাথা কমে যায়। ছেক দেওয়ার সময় আবার বিভিন্ন ধরনের মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে ব্যথা উপশম হবে। গরম সংকোচন পেশী শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে।ঠান্ডা সংকোচন ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৪. হলুদ দুধ

>> হলুদের মধ্যে কুরকুমিন নামক উপাদান আছে, যা প্রদাহ কমায়। প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস গরম দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে খাওয়া অনেক উপকারী ।কোমরের ব্যাথা কমাতে হলুদ একটি কার্যকর উপাদান। তাই কোমরের ব্যথা দূর করতে প্রতিদিন দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন।

৫. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

>> স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া মেরুদণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করে।কোমরের ব্যথা কমতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, ডিম, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি খেতে পারেন।

৬. কোমরের বেল্ট

>> কোমরে সমর্থন দেওয়ার জন্য একটি ব্যাক সাপোর্ট বেল্ট ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়। এটি কোমরের চাপ কমাতে সাহায্য করে।

৭ . আদা

>> আদা প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক। কোমরের ব্যথায় যারা ভুগছেন তারা নিয়মিত আদা খেতে পারেন। নিয়মিত আধা খেলে কোমর ব্যথা ও নার্ভের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

৮. ব্যথানাশক তেল মিশ্রণ

>> সরিষার তেল বা নারকেল তেলে মেথি,আদা এবং রসুন গরম করে তেলটি সুষম গরম অবস্থায় হালকাভাবে কোমরে ম্যাসাজ করুন।

৯. সঠিক ভঙ্গি

>> সঠিকভাবে বসা, শোয়া ও হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা । কোমরকে সঠিক ভঙ্গিতে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

১০. স্ট্রেচিং ও যোগব্যায়াম

>> যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং ব্যায়াম কোমর এর মাংসপেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। কিছু আসন যেমন ভুজঙ্গাসন বা শলভাসন ব্যথা কমাতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী এবং নমনীয়তা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

শেষ কথা

আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল দ্রুত কোমরের ব্যথা কমানোর ১০ ঘরোয়া উপায়। আশা করতেছি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে কোমর ব্যথা কি এবং কারণ, কোমর ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেল আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top